হায় সভ্যতা !!! সভ্যতার লেবাস পরিহিত পশ্চিমারা, আমরা আধাপেটা বাঙ্গালী তোমাদের চাইতে অনেক ভালোই আছি।
শুক্কুর আলী গঞ্জ থেকে সদাই পাতি কিনে বাড়ীতে ফিরছেন। গ্রামের
মেঠো পথে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ীর পাশে লাগোয়া কাঁঠাল বাগানে ঢুঁ মারতেই তাঁর
চোখ আটকে যায় একটি কাঁঠাল গাছের ডালে। একই গ্রামের সহজ সরল ছেলে হিসেবে
খ্যাত মন্টু মিয়ার কাঁঠাল চুরির দৃশ্য দেখে শুক্কুর আলীই বা কেন যে কারো
চোখে ধাঁধাঁ লাগবে তার উপর যদি মন্টু মিয়া হয় গ্রামের মোড়ল চাঁন মিয়ার
পুত্র। শুক্কুর আলীর চোখ সহ্য করেনি মন্টু মিয়ার কাঁঠাল চুরির দৃশ্যটি, তাই
গলার স্বরটাকে কাঁঠাল গাছের ডাল সমান উঁচু করে হুংকার ছাড়লেন।
মাথার উপর আকাশ সমান লজ্জায় অবনত হয়ে কাঁপা শরীর নিয়ে মন্টু মিয়া কাঁঠাল গাছ থেকে মাটিতে অবতরণ করলো। লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখ, ভয়ে কুঁকড়ানো শরীরটা নিয়ে নত শিরে আকুতি জানাতে লাগলো শুক্কুর আলীর কাছে চুরির বিষয়টা যাতে গোপন থাকে। কিন্তু শুক্কুর আলীর হৃদয় অত সহজে গলার নয়। মন্টুর সার্টের কলার চেপে আবারো হুংকার দিয়ে বললেন "তুই এত্ত ভালো মাইনষের ছাওয়াল হইয়া চুরি করতে আইছস, তোর বাপেরে আমরা এতো ইজ্জত করি, সম্মান করি, গেরামের বেবাক বিচার তোর বাপে করে আর তুই সেই বাপের ছাওয়াল হইয়া চুরি করতেছস, তোর বাপ কই ? চল, তোরে লইয়া তোর বাপের কাছে যামু নালিশ দিতে, আমি এর বিচার চাই" মন্টু মিয়া কোন উপায় না দেখে বললো "বাপজান ত বাড়ীতে নাই" মন্টুর উত্তর শুনে শুক্কুর আলী গলার স্বরটাকে আরো এক ধাপ উপরে তুলে বললেন "বাড়ীতে নাই ? তাইলে কই গ্যাছে ?" ভয়ে হিম হয়ে যাওয়া মন্টু মিয়া তখন অন্য কোন উপায়ান্তর না দেখে কম্পিত তর্জনী অদূরে অবস্থিত অন্য একটা কাঁঠাল গাছের মাথার দিকে উঁচিয়ে বললো "বাপজানও আমার লগে চুরি করতে আইছে, ঐ গাছের মাথায় বাপজান বইয়া আছে"
এটা হলো আমাদের দেশের প্রচলিত বেশ জনপ্রিয় কয়েকটা কৌতুকের একটি। যদিও আমি এখন কোন কৌতুক করতে বা বলতে আসিনি। কিন্তু যখন আমি কোন কিছু লিখতে গিয়ে আমার কলম শুরুতেই, মাঝপথে, শেষের দিকে বা যেখানেই আটকে যায় তখনই সেখানে সুবিধে মতো দু-একটা কৌতুকের অনুপ্রবেশ করিয়ে দিই। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে রচিত এই কৌতুকটা শুনে যে কেউ প্রাণ খুলে হাসতে পারেন, গলা ছেড়ে গাইতে পারেন তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু যাদের নিছক কৌতুক শুনে হাসি পায়না সদা গুরু গম্ভীর হয়ে ঘাঁপটি মেরে বসে থাকেন তাদেরকে সাথে নিয়ে আমাদের দেশের সীমানা পেরিয়ে সভ্যতার লেবাস পরে জাতি হিসেবে শিষ্টাচারের চরম শিখরে পৌছে যাওয়া কিছু পশ্চিমা দেশগুলোতে ঘুরে আসার ইচ্ছা জাগছে।
লক্ষ কষ্টে অর্জিত আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ পরপর কয়েকবার যখন দূর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় তখন আমাদের দেশের অন্দরমহলে এর দায় এড়ানোর জন্য এক দল অন্যদলকে দোষারোপ করছে। আর ঠিক তক্ষুনি কিছু সুযোগ সন্ধানী সর্বদা সুবিধাবাদীরা নিজের আখের গোছাতে গোছাতে পশ্চিমাদের চরণ চাটতে চাটতে ডিগ্রি আর পুরুস্কারের ভাড়ারটা ক্রমে ক্রমে সমৃদ্ধ করে চলেছেন। আর উঁৎ পেতে থাকা সুযোগে ফাঁক ফোঁকর পেলেই মমতাময়ী মাতৃসম দেশটাকে কথায় কথায় ভর্ৎসনা করেন পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে তুলনা দিয়ে। স্বীকার করছি আমাদের দেশের খেটে খাওয়া মানুষগুলো ধোয়া তুলসী পাতা নয়, কিন্তু তাদের সংঘটিত বেশির ভাগ অপরাধগুলি হয় পেটের পীড়া মোচনের জন্য। আমাদের দেশে যে পরিমান বিদ্যূতের চাহিদা আছে সে পরিমানে বিদ্যূৎ উৎপাদন হয়না বলেই প্রতিদিনই সারাদেশে স্থান ভেদে কয়েক ঘন্টা অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে। অথচ রোজকার দেশীয় খবরের কাগজে নানান ধরনের অপরাধ প্রকাশিত হলেও আজো আমার চোখে পড়েনি বিদ্যূৎ বিহীন অন্ধকারের সুযোগে আধাপেটা কোন বঙ্গদেশীয় বাঙ্গালী কারো বাসা বাড়ী বা মার্কেটে লুটপাটের মতো কান্ড ঘটিয়েছে।
১৯৭৭ সালের ১৩ই জুলাই বুধবার সন্ধ্যা থেকে পরবর্ত্তী ১২ ঘন্টার জন্য সভ্যতা আর শিষ্টাচারের দেশ নামে খ্যাত মার্কিন মুল্লুকের নিউইয়র্ক শহরে বিদ্যূৎ ছিলো না। সেদিন রাতে সেই অন্ধকারের সুযোগে কি ঘটেছিলো তা আজও বিশ্ববাসী ভুলে নাই। অন্ধকার নিউ ইয়র্কের সেই রাতে রাস্তায় নেমে এসেছিলো মুখোশধারী সভ্যবেশী দুর্বৃত্তরা। তারা বাড়ী ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলো, দোকান পাট লুট করেছিলো। নারী ধর্ষণ করে এবং রাজপথে নগ্ন নারী নিয়ে উৎকট উল্লাসে তাদের অনেকেই মেতে উঠেছিলো। পুলিশ সেই রাতে তিন হাজার দুর্বৃত্তকে গ্রেফতার করে। সে রাতেই ১৫৮ জন পুলিশ ও পুলিশ অফিসার আহত হন। অন্ধকারের এই খেসারত বাবত মার্কিন সরকার ১ কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার বিশেষ সাহায্য মঞ্জুর করেন। ফেডারেল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বল্প সুদে দীর্ঘ মেয়াদি ভিত্তিতে ১০ কোটি ডলার ঋণদানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। ভৌগলিক অবস্থানের কারনেই আমাদের দেশের মানুষের ভাগ্যের উপর দিয়ে প্রতি বছরই নানান রকম প্রাকৃতিক দূর্যোগ আঘাত হানে। সিডর, আইলা, লায়লা, নার্গিসসহ নানা রকমের ঝড় ঝাপ্টার ভয়াল কালো থাবায় হাজারো মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষজন সাধ্য মত সেই গৃহ হীন মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সাহায্যের হাত নিয়ে কিন্তু কখনো শুনিনি গৃহ হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই নেয়া সেই দুস্থ্য মানুষগুলোর রয়ে যাওয়া সম্পদে লুঠেরাদের ছোবল মারতে। কিন্তু জানিনা আপনার স্থির চক্ষুদ্বয় অবাক বিস্ময়ে কোটর হতে বেরিয়ে ললাটে আশ্রয় চাইবে কিনা আমেরিকার পঞ্চম বৃহত্তম শহর হিউস্টনের সেদিনের সেই ঘটনা শুনে।
১৯৮৩ সালের ১৮ই আগষ্ট বৃহস্পতিবারে প্রচন্ড ঝড়ের তান্ডব শুরু হয়। সেই ঝড়ের কারণে ২০ হাজার লোক নিজ নিজ বাড়ী ঘর ত্যাগ করে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। সুযোগ সন্ধানীরা সেবারও হাত পা গুটিয়ে বসে থাকেনি। মানুষজনের ফেলে যাওয়া ঘর বাড়ীতে হানা শুরু করে। লুট করে নেয় ১০০ কোটি ডলারের চেয়েও বেশি সম্পদ। এ তো গেলো মার্কিন মুল্লুকের কথা এবার আসি বৃটিশ সম্রাজ্যে। ধূলো পড়া ঝাপসা হয়ে যাওয়া স্মৃতির বাক্স থেকে ময়লা ঘেঁটে যা পেলাম তা হলো ১৯৮২ সালের গোড়ার দিকে যুক্তরাজ্যের একটা শহর হঠাৎ করেই বিদ্যূৎশূন্য হয়ে পড়ে। পশ্চিমা দেশগুলোতে বিদ্যূতের অনুপস্থিতি মানেই শিষ্টাচার আর সভ্যতার মুখোশ উন্মোচন। আমরা সাধারণ বিশ্ববাসী সেই দিনে জানতে পারি সভ্যতার আড়ালে কতটা অসভ্যতা বাস করতে জানে। বিলেতের সেই অন্ধকার শহরে সেদিন রাতে লুঠেরাদের উল্লাস কীর্তন রেকর্ড করে বিবিসি সেদিন রাতের অনুষ্ঠানে সারা বিশ্ববাসীকে শুনিয়েছিলো। অতি সম্প্রতি ইভটিজিং নামক একটা শব্দের আমদানি হয়েছে আমাদের দেশে। ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে মিটিং, মিছিল, মানববন্ধন সহ নানান রকম কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে দেশের সর্বত্র। ইভটিজিংকে আমি যদি নারী নির্যাতনের আয়তায় নিয়ে ২০০৯ সালের পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রাখি তাহলে দেখতে পাই আমাদের দেশে ২০০৯ সালে নারী নির্যাতনের সংখ্যা ছিলো ৯ হাজার ৪'শ ৬০টি। আর এই সংখ্যাটা খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বছর শেষে দাঁড়ায় ৬ লক্ষ ৮৩ হাজার ২৮০টি তে আর তাও আবার এই হিসেবটা শুধু মাত্র ধর্ষণের !!! এই তথ্য গেলার পরও যাদের পেট টেঁর পায়ানি তাদের জন্য নিচের পরিসংখ্যান।
নারী নির্যাতনে বিশ্বের প্রথম স্থান অর্জনকারী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যানঃ
* যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি মিনিটে ১.৩ জন মহিলা ধর্ষিত হয়। যা ঘন্টার হিসাবে দাঁড়ায় ৭৮ জনে এবং দিন শেষে এই সংখ্যা হয় ১,৮৭২ জনে। যা মাসে ৫৬,১৬০ এবং বছরের অংকে দাঁড়ায় ৬,৮৩,২৮০ জনে !!
* আমেরিকার প্রতি ৩ জনের মধ্যে ১ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।
* ধর্ষণের ঘটনায় আমেরিকাই হচ্ছে বিশ্বের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জনকারী দেশ। যেখানে জার্মানের তুলনায় ৪ গুণ, যুক্তরাজ্যের তুলনায় ১৩ গুন ও জাপানের তুলনায় ২০ গুন বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
* আমেরিকার প্রতি ৭ জনের ১ নারী তার স্বামী কর্তৃক ধর্ষিত হয় !!!
* ধর্ষণের শিকার নারীদের মধ্যে ৮৩ ভাগ নারী ২৪ বা তারচেয়ে কম বয়সী।
* ১ চতুর্থাংশ কলেজ ছাত্রী ধর্ষণের আতঙ্কে ভোগে।
* 1 in 12 males students surveyed had commited acts that met the legal definition of rape. Furthermore, 84% of the men who had commited such acts said what they had done was definitely not rape.
* ৭৫ ভাগ ছাত্র ও ৫৫ ভাগ ছাত্রী নেশা বা নেশাজাত দ্রব্য গ্রহনের পর উভয়ের সম্মতিতে যৌন কর্মে লিপ্ত হয় বা সম্মত ধর্ষণে জড়িত।
* মাত্র ১৬ ভাগ ধর্ষনের ঘটনার প্রতিবেদন পুলিশের নিকট পৌছে।
তথ্য সূত্র - ১
তথ্য সূত্র - ২ FBI
এবার দেখা যাক সভ্যতার ঝান্ডাবাহী অন্য একটি দেশ যুক্তরাজ্যের কিছু যৌন নির্যাতন সহ অন্যান্ন অপরাধের পরিসংখ্যানঃ
* A Home Office study of 446 rape victims in 1992 found that most of the attacks on children under 12 and women over 45 were committed by men who were intimate friends. Only 12 per cent of the total attacks were committed by strangers, while 43 per cent were committed by acquaintances and 45 per cent by intimate friends.
* A study in 1998 found a similar pattern with 43 per cent of attacks on 457 rape victims being carried out by intimate friends of the victims, and 46 per cent by acquaintances. A total of 99 rapes were carried out by men the victims had met within 24 hours of the attack. Only three incidents were recorded against work colleagues. There was a fall in the number of attacks by total strangers, with 52 rapes compared to 98 in 1992.
* ১৯৯৭ এর নির্বাচনে প্রতি মিনিটে ২টি করে সংঘর্ষ হয়।
* ব্রিটেন হচ্ছে ইউরোপের ২য় সর্বোচ্চ অপরাধ প্রবণ দেশ।
* প্রতিবেশী দেশ ফ্রান্স, জার্মানী, স্পেন ও ইটালীর চেয়ে ব্রিটেনেনে বেশি হত্যাকান্ড ঘটে।
* ডাকাতির ঘটনায় ইউরোপে ৫ম।
* ইঊরোপের মধ্যে ব্রিটেনে সবচেয়ে বেশি চুরি হয়, যা জার্মানী এবং ইটালীর দ্বিগুন।
* In the UK, there are 2,034 offences per 100,000 people, way ahead of second-placed Austria with a rate of 1,677.
* ব্রিটেনের ১০০,০০০ লোকের মধ্যে ২,০৩৪ জন লোক বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত, এই পথে অষ্ট্রিয়া হচ্ছে দ্বিতীয় স্থান অর্জন কারী দেশ যেখানে এই গড় হচ্ছে ১,৬৭৭
ব্রিটিশ ক্রাইম সার্ভে (BCS) ২০০৯ সালের যুক্তরাজ্যের ওয়েলসের একটি অপরাধের পরিসখ্যান প্রকাশ করে যাতে দেখা যায়ঃ
১। নারী ধর্ষণঃ ২০০৮/৯ সালে -- ১২১৬৫ টি এবং ২০০৭/৮ সালে -- ১১৬৩১ টি
২। পুরুষ ধর্ষণঃ ২০০৮/৯ সালে -- ৯৬৮ টি এবং ২০০৭/৮ সালে ১০০০৮ টি
৩। সার্বিক যৌন নির্যাতনের ঘটনাঃ ২০০৮/৯ -- ৫১,৪৮৮ টি
৪। ডাকাতিঃ ২০০৮/৯ সালে ৮০,১০৪ টি
৫।সার্বিক চুরি ২০০৮/৯ সালে ৫,৮১,৩৯৭ টি
তথ্য সূত্র - ৩ ডেইলী মেইল
তথ্য সূত্র - ৪ গার্ডিয়ান
তথ্য সূত্র - ৫ ইন্ডিপেন্ডেন্ড
জবরুল আলম সুমন
সিলেট।
৩০শে নভেম্বর ২০১০ ইংরেজী।
মাথার উপর আকাশ সমান লজ্জায় অবনত হয়ে কাঁপা শরীর নিয়ে মন্টু মিয়া কাঁঠাল গাছ থেকে মাটিতে অবতরণ করলো। লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখ, ভয়ে কুঁকড়ানো শরীরটা নিয়ে নত শিরে আকুতি জানাতে লাগলো শুক্কুর আলীর কাছে চুরির বিষয়টা যাতে গোপন থাকে। কিন্তু শুক্কুর আলীর হৃদয় অত সহজে গলার নয়। মন্টুর সার্টের কলার চেপে আবারো হুংকার দিয়ে বললেন "তুই এত্ত ভালো মাইনষের ছাওয়াল হইয়া চুরি করতে আইছস, তোর বাপেরে আমরা এতো ইজ্জত করি, সম্মান করি, গেরামের বেবাক বিচার তোর বাপে করে আর তুই সেই বাপের ছাওয়াল হইয়া চুরি করতেছস, তোর বাপ কই ? চল, তোরে লইয়া তোর বাপের কাছে যামু নালিশ দিতে, আমি এর বিচার চাই" মন্টু মিয়া কোন উপায় না দেখে বললো "বাপজান ত বাড়ীতে নাই" মন্টুর উত্তর শুনে শুক্কুর আলী গলার স্বরটাকে আরো এক ধাপ উপরে তুলে বললেন "বাড়ীতে নাই ? তাইলে কই গ্যাছে ?" ভয়ে হিম হয়ে যাওয়া মন্টু মিয়া তখন অন্য কোন উপায়ান্তর না দেখে কম্পিত তর্জনী অদূরে অবস্থিত অন্য একটা কাঁঠাল গাছের মাথার দিকে উঁচিয়ে বললো "বাপজানও আমার লগে চুরি করতে আইছে, ঐ গাছের মাথায় বাপজান বইয়া আছে"
এটা হলো আমাদের দেশের প্রচলিত বেশ জনপ্রিয় কয়েকটা কৌতুকের একটি। যদিও আমি এখন কোন কৌতুক করতে বা বলতে আসিনি। কিন্তু যখন আমি কোন কিছু লিখতে গিয়ে আমার কলম শুরুতেই, মাঝপথে, শেষের দিকে বা যেখানেই আটকে যায় তখনই সেখানে সুবিধে মতো দু-একটা কৌতুকের অনুপ্রবেশ করিয়ে দিই। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে রচিত এই কৌতুকটা শুনে যে কেউ প্রাণ খুলে হাসতে পারেন, গলা ছেড়ে গাইতে পারেন তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু যাদের নিছক কৌতুক শুনে হাসি পায়না সদা গুরু গম্ভীর হয়ে ঘাঁপটি মেরে বসে থাকেন তাদেরকে সাথে নিয়ে আমাদের দেশের সীমানা পেরিয়ে সভ্যতার লেবাস পরে জাতি হিসেবে শিষ্টাচারের চরম শিখরে পৌছে যাওয়া কিছু পশ্চিমা দেশগুলোতে ঘুরে আসার ইচ্ছা জাগছে।
লক্ষ কষ্টে অর্জিত আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ পরপর কয়েকবার যখন দূর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় তখন আমাদের দেশের অন্দরমহলে এর দায় এড়ানোর জন্য এক দল অন্যদলকে দোষারোপ করছে। আর ঠিক তক্ষুনি কিছু সুযোগ সন্ধানী সর্বদা সুবিধাবাদীরা নিজের আখের গোছাতে গোছাতে পশ্চিমাদের চরণ চাটতে চাটতে ডিগ্রি আর পুরুস্কারের ভাড়ারটা ক্রমে ক্রমে সমৃদ্ধ করে চলেছেন। আর উঁৎ পেতে থাকা সুযোগে ফাঁক ফোঁকর পেলেই মমতাময়ী মাতৃসম দেশটাকে কথায় কথায় ভর্ৎসনা করেন পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে তুলনা দিয়ে। স্বীকার করছি আমাদের দেশের খেটে খাওয়া মানুষগুলো ধোয়া তুলসী পাতা নয়, কিন্তু তাদের সংঘটিত বেশির ভাগ অপরাধগুলি হয় পেটের পীড়া মোচনের জন্য। আমাদের দেশে যে পরিমান বিদ্যূতের চাহিদা আছে সে পরিমানে বিদ্যূৎ উৎপাদন হয়না বলেই প্রতিদিনই সারাদেশে স্থান ভেদে কয়েক ঘন্টা অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে। অথচ রোজকার দেশীয় খবরের কাগজে নানান ধরনের অপরাধ প্রকাশিত হলেও আজো আমার চোখে পড়েনি বিদ্যূৎ বিহীন অন্ধকারের সুযোগে আধাপেটা কোন বঙ্গদেশীয় বাঙ্গালী কারো বাসা বাড়ী বা মার্কেটে লুটপাটের মতো কান্ড ঘটিয়েছে।
১৯৭৭ সালের ১৩ই জুলাই বুধবার সন্ধ্যা থেকে পরবর্ত্তী ১২ ঘন্টার জন্য সভ্যতা আর শিষ্টাচারের দেশ নামে খ্যাত মার্কিন মুল্লুকের নিউইয়র্ক শহরে বিদ্যূৎ ছিলো না। সেদিন রাতে সেই অন্ধকারের সুযোগে কি ঘটেছিলো তা আজও বিশ্ববাসী ভুলে নাই। অন্ধকার নিউ ইয়র্কের সেই রাতে রাস্তায় নেমে এসেছিলো মুখোশধারী সভ্যবেশী দুর্বৃত্তরা। তারা বাড়ী ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলো, দোকান পাট লুট করেছিলো। নারী ধর্ষণ করে এবং রাজপথে নগ্ন নারী নিয়ে উৎকট উল্লাসে তাদের অনেকেই মেতে উঠেছিলো। পুলিশ সেই রাতে তিন হাজার দুর্বৃত্তকে গ্রেফতার করে। সে রাতেই ১৫৮ জন পুলিশ ও পুলিশ অফিসার আহত হন। অন্ধকারের এই খেসারত বাবত মার্কিন সরকার ১ কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার বিশেষ সাহায্য মঞ্জুর করেন। ফেডারেল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বল্প সুদে দীর্ঘ মেয়াদি ভিত্তিতে ১০ কোটি ডলার ঋণদানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। ভৌগলিক অবস্থানের কারনেই আমাদের দেশের মানুষের ভাগ্যের উপর দিয়ে প্রতি বছরই নানান রকম প্রাকৃতিক দূর্যোগ আঘাত হানে। সিডর, আইলা, লায়লা, নার্গিসসহ নানা রকমের ঝড় ঝাপ্টার ভয়াল কালো থাবায় হাজারো মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষজন সাধ্য মত সেই গৃহ হীন মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সাহায্যের হাত নিয়ে কিন্তু কখনো শুনিনি গৃহ হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই নেয়া সেই দুস্থ্য মানুষগুলোর রয়ে যাওয়া সম্পদে লুঠেরাদের ছোবল মারতে। কিন্তু জানিনা আপনার স্থির চক্ষুদ্বয় অবাক বিস্ময়ে কোটর হতে বেরিয়ে ললাটে আশ্রয় চাইবে কিনা আমেরিকার পঞ্চম বৃহত্তম শহর হিউস্টনের সেদিনের সেই ঘটনা শুনে।
১৯৮৩ সালের ১৮ই আগষ্ট বৃহস্পতিবারে প্রচন্ড ঝড়ের তান্ডব শুরু হয়। সেই ঝড়ের কারণে ২০ হাজার লোক নিজ নিজ বাড়ী ঘর ত্যাগ করে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। সুযোগ সন্ধানীরা সেবারও হাত পা গুটিয়ে বসে থাকেনি। মানুষজনের ফেলে যাওয়া ঘর বাড়ীতে হানা শুরু করে। লুট করে নেয় ১০০ কোটি ডলারের চেয়েও বেশি সম্পদ। এ তো গেলো মার্কিন মুল্লুকের কথা এবার আসি বৃটিশ সম্রাজ্যে। ধূলো পড়া ঝাপসা হয়ে যাওয়া স্মৃতির বাক্স থেকে ময়লা ঘেঁটে যা পেলাম তা হলো ১৯৮২ সালের গোড়ার দিকে যুক্তরাজ্যের একটা শহর হঠাৎ করেই বিদ্যূৎশূন্য হয়ে পড়ে। পশ্চিমা দেশগুলোতে বিদ্যূতের অনুপস্থিতি মানেই শিষ্টাচার আর সভ্যতার মুখোশ উন্মোচন। আমরা সাধারণ বিশ্ববাসী সেই দিনে জানতে পারি সভ্যতার আড়ালে কতটা অসভ্যতা বাস করতে জানে। বিলেতের সেই অন্ধকার শহরে সেদিন রাতে লুঠেরাদের উল্লাস কীর্তন রেকর্ড করে বিবিসি সেদিন রাতের অনুষ্ঠানে সারা বিশ্ববাসীকে শুনিয়েছিলো। অতি সম্প্রতি ইভটিজিং নামক একটা শব্দের আমদানি হয়েছে আমাদের দেশে। ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে মিটিং, মিছিল, মানববন্ধন সহ নানান রকম কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে দেশের সর্বত্র। ইভটিজিংকে আমি যদি নারী নির্যাতনের আয়তায় নিয়ে ২০০৯ সালের পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রাখি তাহলে দেখতে পাই আমাদের দেশে ২০০৯ সালে নারী নির্যাতনের সংখ্যা ছিলো ৯ হাজার ৪'শ ৬০টি। আর এই সংখ্যাটা খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বছর শেষে দাঁড়ায় ৬ লক্ষ ৮৩ হাজার ২৮০টি তে আর তাও আবার এই হিসেবটা শুধু মাত্র ধর্ষণের !!! এই তথ্য গেলার পরও যাদের পেট টেঁর পায়ানি তাদের জন্য নিচের পরিসংখ্যান।
নারী নির্যাতনে বিশ্বের প্রথম স্থান অর্জনকারী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যানঃ
* যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি মিনিটে ১.৩ জন মহিলা ধর্ষিত হয়। যা ঘন্টার হিসাবে দাঁড়ায় ৭৮ জনে এবং দিন শেষে এই সংখ্যা হয় ১,৮৭২ জনে। যা মাসে ৫৬,১৬০ এবং বছরের অংকে দাঁড়ায় ৬,৮৩,২৮০ জনে !!
* আমেরিকার প্রতি ৩ জনের মধ্যে ১ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।
* ধর্ষণের ঘটনায় আমেরিকাই হচ্ছে বিশ্বের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জনকারী দেশ। যেখানে জার্মানের তুলনায় ৪ গুণ, যুক্তরাজ্যের তুলনায় ১৩ গুন ও জাপানের তুলনায় ২০ গুন বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
* আমেরিকার প্রতি ৭ জনের ১ নারী তার স্বামী কর্তৃক ধর্ষিত হয় !!!
* ধর্ষণের শিকার নারীদের মধ্যে ৮৩ ভাগ নারী ২৪ বা তারচেয়ে কম বয়সী।
* ১ চতুর্থাংশ কলেজ ছাত্রী ধর্ষণের আতঙ্কে ভোগে।
* 1 in 12 males students surveyed had commited acts that met the legal definition of rape. Furthermore, 84% of the men who had commited such acts said what they had done was definitely not rape.
* ৭৫ ভাগ ছাত্র ও ৫৫ ভাগ ছাত্রী নেশা বা নেশাজাত দ্রব্য গ্রহনের পর উভয়ের সম্মতিতে যৌন কর্মে লিপ্ত হয় বা সম্মত ধর্ষণে জড়িত।
* মাত্র ১৬ ভাগ ধর্ষনের ঘটনার প্রতিবেদন পুলিশের নিকট পৌছে।
তথ্য সূত্র - ১
তথ্য সূত্র - ২ FBI
এবার দেখা যাক সভ্যতার ঝান্ডাবাহী অন্য একটি দেশ যুক্তরাজ্যের কিছু যৌন নির্যাতন সহ অন্যান্ন অপরাধের পরিসংখ্যানঃ
* A Home Office study of 446 rape victims in 1992 found that most of the attacks on children under 12 and women over 45 were committed by men who were intimate friends. Only 12 per cent of the total attacks were committed by strangers, while 43 per cent were committed by acquaintances and 45 per cent by intimate friends.
* A study in 1998 found a similar pattern with 43 per cent of attacks on 457 rape victims being carried out by intimate friends of the victims, and 46 per cent by acquaintances. A total of 99 rapes were carried out by men the victims had met within 24 hours of the attack. Only three incidents were recorded against work colleagues. There was a fall in the number of attacks by total strangers, with 52 rapes compared to 98 in 1992.
* ১৯৯৭ এর নির্বাচনে প্রতি মিনিটে ২টি করে সংঘর্ষ হয়।
* ব্রিটেন হচ্ছে ইউরোপের ২য় সর্বোচ্চ অপরাধ প্রবণ দেশ।
* প্রতিবেশী দেশ ফ্রান্স, জার্মানী, স্পেন ও ইটালীর চেয়ে ব্রিটেনেনে বেশি হত্যাকান্ড ঘটে।
* ডাকাতির ঘটনায় ইউরোপে ৫ম।
* ইঊরোপের মধ্যে ব্রিটেনে সবচেয়ে বেশি চুরি হয়, যা জার্মানী এবং ইটালীর দ্বিগুন।
* In the UK, there are 2,034 offences per 100,000 people, way ahead of second-placed Austria with a rate of 1,677.
* ব্রিটেনের ১০০,০০০ লোকের মধ্যে ২,০৩৪ জন লোক বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত, এই পথে অষ্ট্রিয়া হচ্ছে দ্বিতীয় স্থান অর্জন কারী দেশ যেখানে এই গড় হচ্ছে ১,৬৭৭
ব্রিটিশ ক্রাইম সার্ভে (BCS) ২০০৯ সালের যুক্তরাজ্যের ওয়েলসের একটি অপরাধের পরিসখ্যান প্রকাশ করে যাতে দেখা যায়ঃ
১। নারী ধর্ষণঃ ২০০৮/৯ সালে -- ১২১৬৫ টি এবং ২০০৭/৮ সালে -- ১১৬৩১ টি
২। পুরুষ ধর্ষণঃ ২০০৮/৯ সালে -- ৯৬৮ টি এবং ২০০৭/৮ সালে ১০০০৮ টি
৩। সার্বিক যৌন নির্যাতনের ঘটনাঃ ২০০৮/৯ -- ৫১,৪৮৮ টি
৪। ডাকাতিঃ ২০০৮/৯ সালে ৮০,১০৪ টি
৫।সার্বিক চুরি ২০০৮/৯ সালে ৫,৮১,৩৯৭ টি
তথ্য সূত্র - ৩ ডেইলী মেইল
তথ্য সূত্র - ৪ গার্ডিয়ান
তথ্য সূত্র - ৫ ইন্ডিপেন্ডেন্ড
জবরুল আলম সুমন
সিলেট।
৩০শে নভেম্বর ২০১০ ইংরেজী।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন