ঈদের আনন্দ আসুক সবার জন্য...

আর মাত্র দু'দিন পরেই পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের আনন্দে ভাসবে বিশ্বের সকল মুসলিম জনগোষ্ঠী। সারা বছরে ঈদ আসে দুটি, একটি ঈদ-উল-ফিতর বা রমজানের ঈদ অন্যটি ঈদু-উল-আযহা বা কোরবানীর ঈদ। রমজানের ঈদ নিয়েই সবার মাঝে আনন্দটা বেশি তাই সবাই উৎসবে মুখর হয়ে উঠেন রমজানের ঈদ এলেই। একারণে ইসলাম ধর্মের সবচে বড় ধর্মীয় উৎসব হিসেবে ঈদ-উল-ফিতরকেই গণ্য করা হয়। যারা জামাতের সাথে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে রোজার কঠিন নিয়মাবলী যথাযত ভাবে পালন করেছেন ঈদ আসে তাদের জন্য। যারা ইফতারে আছেন কিন্তু রোজাতে নেই, যারা শোষণে আছেন কিন্তু যাকাতে নেই, ভোগে আছেন কিন্তু নেই ত্যাগে, দিনের বেলা বাইরে গেলেও লাল পর্দার ভেতরে গিয়ে আয়েশ করে পেট ভরেন ঈদ আসে তাদের জন্য। যাদের সারা বছরটাই ঈদে ঈদে কাটে ঈদ আসে তাদের জন্যও। ঈদের সময় যতটা ঘনিয়ে আসে সামর্থ্যবানদের মধ্যে এই প্রকার মৌণ প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে যায় কে কার চেয়ে ভালো দামের জামা কাপড় নিজের গায়ে চড়াতে পারেন তা নিয়ে। তাই এই পবিত্র মহোৎসবকে সামনে রেখে সামর্থ্যবানেরা দু হাতে অঢেল টাকা পয়সা খরচ করতে কোন দ্বিধা করেন না। এটা একটা ইজ্জতের সওয়ালও বটে, আর কে-ই চাইবে তার ইজ্জত গাড়ির টায়ারের মতো পাংঙ্কচারড হয়ে যাক। পাশের বাসায় বেশি লোক সমাগম হবে, বাহারি ডিজাইনের শাড়ী-চুড়ি, জামা-কাপড়, কসমেটিক্স, উন্নত মানের খাওয়া-দাওয়া হবে আর তার তুলনায় আমার ঘরের আয়োজন কিছুটা নিম্নমূখী হবে তা কি কখনো মেনে নেয়া যায় ? সারা বছর দু হাতে সাদা-কালো টাকা আয় রোজগার করেছি আর খরচ করবো মাত্র একদিন তাতে কি কার্পণ্যতা মানায় ? তাইতো এই ঈদের উৎসবকে কেন্দ্র করে অনেক বিত্তশালীরা চিত্তকে প্রসারিত বিদেশে চলে যান ঈদের শপিং করতে। কারণ এদেশে ছোট লোকদের কুনূইয়ের ঠ্যালায় ভালো মতো শপিং করার পরিবেশ মেলেনা তাছাড়া রাস্তায় বেরোলেই ফকিরের দল থেকেও মুক্তি মিলেনা সহজেই। তাইতো নিরাপদে শপিং করার জন্য ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশকে এনারা বেছে নেন। অথচ এসব বিত্তশালীরা নিজের চিত্তকে তৃপ্ত করতে মত্ত থাকায় ভুলে যান পবিত্র রমজানের মূল বিষয়। রমজানের মাসকে বলা হয় আত্মশুদ্ধির মাস, সারাদিন অভুক্ত থেকে এবাদত করার মাস, নিজের বিবেককে জাগ্রত করার মাস। রমজানুল মোবারকের এই আত্মশুদ্ধির মাসেও যে মানুষ তার বিবেককে জাগাতে পারেনি, পারেনি নিজের দম্ভকে দমিয়ে রাখতে; সামর্থ্য থাকা স্বত্বেও পারেনি অভুক্ত মানুষের মুখে একটু খাবার তুলে দিতে। তার আশে পাশে যে বিবসনা নারী বা ছোট ছোট বিবস্ত্র ছেলে মেয়েরা ঘুরে বেড়ায় তাদেরকে এক টুকরো কাপড় দান না করে নিজের গায়ে লক্ষ টাকার ঝলমলে পোষাক চাপায় সে কখনোই ঈদের প্রকৃত পবিত্র আনন্দে সামিল হতে পারেনা। আমার পাশে থাকা নিরন্ন বিবস্ত্র মানুষদেরকে যদি প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে তাদের মুখে একটু হাসি ফোটাতে পারি তাহলে তার চেয়ে আনন্দের আর কি-ই বা হতে পারে। আনন্দ হোক নির্মল। এই নির্মল আনন্দ থেকে কেউ যেন বঞ্চিত না হয় আমরা সেদিকে যেন সজাগ থাকতে পারি। আজ আর বেশি কিছু লিখবো না। আমার বিপরীতমূখী লেখাতে ইদানিং অনেকেই বিরক্ত হচ্ছেন বলে আমার ধারণা তাই আর কাউকে বিরক্ত করতে ইচ্ছে করছেনা পরিশেষে আমার শ্রদ্ধাভাজন ভাই বন্ধু ও সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদেরকে জানাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা। অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক সবার জীবন। ঈদ মোবারক।

জবরুল আলম সুমন
সিলেট।
২৭শে আগষ্ট ২০১১ খৃষ্টাব্দ।

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পোস্ট পুরাতন পোস্ট হোম

    আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগতম

    নিজের লেখা দিয়ে নিজের মতো করে এই ব্লগটি সাজানোর চেষ্টা করেছি, আমার এই ব্লগটি যদি আপনাদের ভালো লাগে তবেই আমার এই শ্রম স্বার্থক হবে। ব্লগটি পরিদর্শন করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

ব্লগটি আজ দেখা হয়েছে মোট

ইতিহাসের এই দিনে

Flickr Images

2014 © জবরুল আলম সুমন কর্তৃক. Blogger দ্বারা পরিচালিত.

এক ঝলকে আমি

আমার ফটো
নিজের সম্পর্কে বলার মত সঞ্চয় আমার নেই। নিজেকে স্বচ্ছ আয়নার মতই ভাবি, আমার প্রিয় বন্ধুরা যখন আমার সামনে এসে দাঁড়ায় আমি তখন তাদের প্রতিবিম্ব মাত্র। তাতেই আমার সুখ। গান শুনতে পছন্দ করি, পছন্দ করি লিখতে আর সময় সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ি অচেনা পৃথিবীটাকে চেনার জন্য।

এই ব্লগটি সন্ধান করুন


Recent Comments