প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য নিষিদ্ধ !!! বিশেষ করে বিবাহ যোগ্য সন্তানদের অভিভাবকগন, ভুলক্রমে নোটটা পড়ে ফেললেও হুমকি ধামকি দেয়া যাবেনা...

রাত তিনটা বাজে, বিছানা ঝেড়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। হঠাৎ করেই মোবাইল ফোন বেজে উঠলো। মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই দেখি শাহীন ভাই  (কিশোর শাহীন বিশিষ্ট সংগীত পরিচালক) ফোন করেছেন। আমি ফোনটা রিসিভ করতেই শাহীন ভাই কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললেন সুমন তুমি কি ঘুমাচ্ছো ? আমি স্বভাবসুলভ ভাবে একটু রসিকতা করে বললাম নাহ, এই সন্ধ্যায় কেউ কি ঘুমায় ? আমার এই ছোট্ট রসিকতা তাকে আনন্দিত করতে পারেনি। তিনি দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন সুমন আমি খুব ঝামেলায় আছি। কাল ক্ষেপন না করে আমি যথেষ্ট গম্ভীর্যতা কন্ঠে ফুটিয়ে তুলে বললাম কি হয়েছে ?
তিনি আমার গম্ভীর্যতার দশগুন বেশী হতাশা মিশিয়ে জানালেন যে তাঁর ভাগনা (শাহরুখ হোসেন মনা, সেও একজন উঠতি গায়ক। ইতিমধ্যে দু চারটা মিশ্র এ্যলবামে তার কন্ঠের ঝলক দেখিয়ে দিয়েছে) একটা মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। তারা বিয়ে করে এখন অন্য একটা স্থানে আত্মগোপন করে আছে।

আমি তার হতাশাকে ফুটবলের মতো লাত্থি (রবার্তো কার্লোসের চাইতেও আমার এই কিকটা অনেক শক্তিশালী ছিলো !!) মেরে উড়িয়ে দিয়ে বললাম এতো অনেক ভালো খবর, কোথায় মিষ্টি খাওয়াবেন তা না করে রাজ্যের সব দুঃশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে বসে আছেন। জবাবে যা শুনলাম তা শুনে আমার চান্দি গরম অবস্থা !!! মেয়ের বাবা মামলা করেছে। যেনতেন মামলা নয় সোজা ৩৬৪ ধারায় অপহরণ মামলা। দুঃখের বিষয় হলো আমার প্রিয় শাহীন ভাইকেও সেই মামলায় আসামী করা হয়েছে। আমি কোন কিছু না ভেবেই বললাম তাহলে আমি এখন কি করতে পারি। জবাবে শাহীন ভাই বললেন মনা ও তার নববধুকে আমার বাড়ীতে আশ্রয় দিতে হবে। আমি বিনা বাক্যে রাজী হয়ে গেলাম। এখানে উল্লেখ্য যে শাহীন ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয়ের সূত্র ধরে এখন আমাদের দুই পরিবারের মধ্য মারাত্মক রকমের সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। শাহীন ভাইয়ের পরিবারের সদস্য আমাদের পরিবারের সদস্যরা একে অন্যের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করেন এবং তা এখনো বিদ্যমান। তাই তাদেরকে আমাদের বাসায় আশ্রয় দিতে আমার কোন সমস্যা ছিলো না।

রাত তিনটার দিকে শাহীন ভাই আমাকে জানালেও মনারা ভোর ৬টার দিকে আমাদের বাসায় এসে উপস্থিত হয়। তারমানে শাহীন ভাই মনাদেরকে রাত দশটায় গাড়িতে তুলে আমাকে রাত তিনটার সময় জানিয়েছেন। যাহোক মনারা আমাদের বাসায় এসে অনেকটা নিরাপদ বোধ করলেও মনের মধ্যে খুব একটা শান্তি ছিলো না। যদিও জয়া (মনার বউয়ের নাম) প্রাপ্ত বয়স্কা। কিন্তু জয়ার বাবার দাবী তাঁর মেয়ে এখনো নাবালক। শাহীন ভাইও কিছু দিন গা ঢাকা দিতে ঢাকা ত্যাগ করেন। কিন্তু আমার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। এবার মামলা মোকাবিলা করার পালা। দায়িত্ব পড়লো আমার ঘাড়ে। আমি সিলেট থেকে মামলা চালানোর জন্য ঢাকা রওয়ানা দিলাম। আমার বেশ ক'টা বন্ধু হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করছে তাই প্রথমে তাদের দ্বারস্থ হলাম। তাদের কাছ থেকে উপরোক্ত মামলার মারপ্যাঁচ আয়ত্ব করলাম, তারপর আমার সিনিয়র বন্ধু অ্যাডভোকেট কামাল হোসেনের হাতে মামলার নথি পত্র তুলে দিলাম। কামাল ভাই প্রথমে আমার কাছে পাত্র/পাত্রীর বয়স জানতে চাইলো। আমি বললাম ছেলের বয়স ২৫ আর মেয়ের বয়স ১৯। তারপর বললাম মেয়ে সজ্ঞানে নিজের সম্মতিতে ছেলের হাত ধরে পালিয়ে বিয়ে করেছে। কামাল ভাই আমার কথা শুনে আমাকে আশ্বস্থ করলেন যে এটা কোন ব্যপারই নয় যদিও কামাল ভাইয়ের কাছে কোন দিনই কোন কিছু ব্যপার বলে দেখিনি। কারণ কামাল ভাইয়ের সাথে আমার দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। তিনি আমাকে বললেন যাও বাসায় গিয়ে হাত মুখ ধুঁয়ে শুয়ে পড়ো ঘুম আসার আগেই দেখাবা মামলা খতম...

আমি তার চেম্বার থেকে বের হয়ে মনে মনে ভাবতে থাকলাম আমাদের দেশে ছেলেদের ভোট দেবার বয়স ১৮ হলেও বিয়ের করতে ২১ বছর লাগে কেন ? কারণটা হয়তোবা নির্বাচন কমিশন খুব ভালো করেই জানে একটা সরকার চালানোর চাইতে একটা পরিবার চালানো অনেক কঠিন !!! আর এই কঠিন কাজটি যারা খুব সহজ ভাবে করতে পারছে তারাই জীবনে সবচে বেশি সফল। পরিশ্রান্ত দেহ নিয়ে বাসায় গিয়ে একটা ঘুম দিলাম ঘুম শেষ হলেও মামলা শেষ হয়নি। তবে মামলা বেশি দূরও গড়ায়নি। মনা ও জয়ার বার্থ সার্টিফিকেট প্রদর্শন পূর্বক আদালতে জয়ার জবানবন্দিতে মামলায় সকল আসামীরা খালাস পেয়ে যায়। (এবার আপনি যদি কোন বিবাহযোগ্য সন্তানের অভিবাক হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে অনুরোধ করছি বাকি অংশটা না পড়ার জন্য। তবুও আমার অনুরোধ উপেক্ষা করে যদি তলাতে নামতে থাকে তবে নিজ দায়িত্বে নামেন দয়া করে আমাকে ব্যাঁকা চোখে দেখবেন না) এই ঘটনা থেকে আমি যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করলাম তা সবার সাথে শেয়ার করার লোভ চেপে রাখতে পারছি না। পরিবারের বাধা বিপত্তিকে উষ্ঠা মেরে যারা পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্তে নিজেদের অটল রেখেছেন এবং আইনি জটিলতা বা পালিয়ে বিয়ে করার পর উঠকো ঝামেলা থেকে বাঁচতে চান তাদের জন্য আমার এই নোটটা একটা আশার আলো হতে পারে।

পালিয়ে বিয়ে করতে গেলে ছেলে মেয়েদের অনেকের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দেয় যেমন বিয়ের পরে কোনো সমস্যা হবেনা তো বা বিয়েটার বৈধতা কিরূপ হবে। বিয়েটাই বা কোথায় করতে হবে ? কোর্টে নাকি কাজি অফিসে ? ছেলেরা ভাবে, মেয়ের বাবা যদি মামলা করে দেয় নারী নির্যাতনের ? তাহলে কি জেল টেল খাটতে হবে ? ইত্যাদি ইত্যাদি। অনেকে ভাবেন এসব ক্ষেত্রে হয়ত কোর্ট ম্যারেজ করতে হবে। কোর্ট ম্যারেজ টার্মটা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। কিন্তু এটা নিয়ে অনেকের একটু ভুল ধারনা আছে। অনেকে যারা অভিভাবকের সম্মতি ছাড়া বা পালিয়ে বিয়ে করতে চায় তারা কোর্ট মারেজ করতে যায় বা করতে চায়।
অনেকে মনে করেন কোর্ট ম্যারেজ হয়তো কোর্টে গিয়ে বিয়ে করা। অথবা মাজিস্ট্রেট-এর সামনে বিয়ে করা। আসলে তা নয়। কোর্ট ম্যারেজ করতে হলে আপনাকে যেতে হবে কোন নোটারী পাবলিকের (সরকারী রেজিস্টার্ড উকিল) কাছে। তিনি আপনাদেরকে (বর কনে) ১০০ বা ২০০ টাকার স্ট্যাম্পে একটি হলফনামায় সই করাবেন যাতে লিখা থাকবে আপনারা প্রাপ্তবয়স্ক এবং সজ্ঞানে সেচ্ছায় বিয়ে করেছেন। তার মানে কি দাড়ালো ? বিয়ে আপনাদেরকে আগেই করতে হবে। কোথায় ? যথারিতি কাজী অফিসে। রেজিষ্ট্রি কাবিনমুলে। কাজী অফিসে কাবিননামায় সই করতে হবে । কাজি সাহেবকে আপনাদের এস এস সি-এর সার্টিফিকেট বা ন্যাশনাল আইডি কার্ড দেখাতে হবে বয়স প্রমানের জন্য। বয়স অবশ্যই আঠারো (মেয়ে) ও একুশ (ছেলে) হতে হবে। আর লাগবে দুইজন স্বাক্ষী। ঐ কাবিননামাই আপনাদের বিয়ের প্রধান আইনী দলিল। আর নোটারী পাবলিকের কাছে গিয়ে আপনি শুধু ঐ দলিলের আরও একটা সম্পূরক আইনী দলিল করে রাখলেন যাতে ভবিষ্যতে মামলা একটু সুবিধা পাওয়া যায়।

তবে জেনে রাখবেন, নোটারী পাবলিকের কাছে করা হলফনামার কোনো দাম নেই যদি আপনার কাবিননামা না থাকে। কাবিননামা থাকলে আপনার বিয়ের পক্ষে আর কোনো ডকুমেন্টই লাগবেনা। কাবিননামাই সব। এক পক্ষ হিন্দু বা মুসলিম বা অন্য ধ‌র্মের হলেও, ধর্ম পরিবর্তন না করেই বিয়ে করা সম্ভব Special Marriage Act-III of 1872 এর আওতায়। এর জন্য কাজীর মত আলাদা ম্যারেজ রেজিষ্টার আছেন। বিয়ে হয়ে গেলে অনেকসময় পরে দুই পক্ষের বাবা মা-রা মেনে নেয়, অনেক সময় মেনে নেয়না। অনেকসময় মেয়ের বাবা ক্ষেপে গিয়ে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করে বসে। মামলাগুলো হয় সাধারনত অপহরণপূর্বক ধর্ষনের। এই মামলাগুলোর জামিন বা রিমান্ড শুনানী এবং বিচার হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। মামলার ধারাগুলো জামিন-অযোগ্য। এবং আমলযোগ্য, মানে পুলিশ এসব ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালতের পারমিশন ছাড়াই আসামিকে এরেস্ট করতে পারে। তাই যখন শুনবেন মামলা হয়ে গেছে তখন থেকে কিছুদিন পালিয়ে থাকুন কারন পুলিশ ধরে নিয়ে গেলে কিন্তু প্রথমেই জামিন হবেনা। আর জানেনই ত বাঘে ছুঁইলে আঠারো ঘা আর পুলিশ ছুঁইলে ছত্রিশ ঘা আর কপাল যদি মন্দ হয় আর কোন মতে র‍্যাব বাবাদের খপ্পরে পড়েন তাহলে তাহলে সেখানে ঘা-য়ের স্থলে খা বসবে। মানে উনারা ধরলে একেবারে খেয়ে ফেলবে... :P যাইহোক মানসিকভাবে শক্ত থাকুন, দুজনেই। মামলা (উক্তরূপ) হবার পর তদন্ত শুরু হবে। ভিকটিম (মেয়ের বাবার চোখে মেয়েটি এখানে ভিকটিম)-এর জবানবন্দী দিতে হবে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-এর সামনে। এটি ২২ ধারার জবানবন্দি, ম্যাজিস্ট্রেট-এর চেম্বারে হয়। কেউ কোন প্রভাব খাটাতে পারেনা। এখানে মেয়েকে বলতে হবে, “আমি সেচ্ছায় বিয়ে করেছি। আমাকে কেউ অপহরণ করেনি। “ ব্যাস, তাহলে মামলায় পুলিশ আর চার্জশীট দেবেনা। আসামি (ছেলে) অব্যাহতি পাবে। তবে মেয়ের বাবা পুলিশকে ঘুষ দিয়ে ছেলেকে কোন ডাকাতি বা মার্ডার কেইসে গ্রেফতার দেখানোর (shown arrest) ব্যবস্থা করতে পারে। আমাদের পুলিশ সব পারে ইনশাআল্লাহ।
এবার পরিবারের অসম্মতি থাকলেও ইচ্ছে হলে পালিয়ে বিয়ে করুন আর নিশ্চিত জীবন যাপন করুন... হা হা হা
শুভ কামনা সবার জন্য।

জবরুল আলম সুমন
সিলেট।
২৩শে জানুয়ারী, ২০১১ খৃষ্টাব্দ।

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পোস্ট পুরাতন পোস্ট হোম

    আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগতম

    নিজের লেখা দিয়ে নিজের মতো করে এই ব্লগটি সাজানোর চেষ্টা করেছি, আমার এই ব্লগটি যদি আপনাদের ভালো লাগে তবেই আমার এই শ্রম স্বার্থক হবে। ব্লগটি পরিদর্শন করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

ব্লগটি আজ দেখা হয়েছে মোট

ইতিহাসের এই দিনে

Flickr Images

2014 © জবরুল আলম সুমন কর্তৃক. Blogger দ্বারা পরিচালিত.

এক ঝলকে আমি

আমার ফটো
নিজের সম্পর্কে বলার মত সঞ্চয় আমার নেই। নিজেকে স্বচ্ছ আয়নার মতই ভাবি, আমার প্রিয় বন্ধুরা যখন আমার সামনে এসে দাঁড়ায় আমি তখন তাদের প্রতিবিম্ব মাত্র। তাতেই আমার সুখ। গান শুনতে পছন্দ করি, পছন্দ করি লিখতে আর সময় সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ি অচেনা পৃথিবীটাকে চেনার জন্য।

এই ব্লগটি সন্ধান করুন


Recent Comments