প্রজাপতি...

গত দুই তিন দিন থেকে শরীর খুব একটা ভালো নেই। আর শরীর ভালো না থাকলে মনটাও ভালো থাকেনা। শরীরের সাথে মন সব সময় প্রতিযোগীতা করতে চায়, এটাই বুঝি প্রতিটা মনের সহজাত অভ্যাসের একটি। সবকিছু মিলিয়ে মনটা আমার উপর বেশ গোঁস্যা করেই আছে। ভালো লাগেনা কোন কিছুই। মন এমন এক আশ্চর্য চিজ ছোট খাটো যে কোন কারনে বা অকারণেও খারাপ হয়ে যায়, ধ্বংসের পথে চলে যায়। মনকে ভালো রাখার জন্য আমরা কত রকমের কলা কৌশল প্রয়োগ করি আমিও তার ব্যতিক্রম নই, হরেক রকমের কৌশল প্রয়োগের পরও মনকে ভালো করতে পারিনি তার বদলে শরীরটা কোন রকমের যত্ন-আত্বি ছাড়াই নিরুপায় হয়ে একটু একটু করে ফিরে যাচ্ছে স্ব-স্থানে।
তাই শরীরকে বাদ দিয়ে মনের দিকে মনোযোগী হই, মন মরা মনকে ভালো করার জন্য রোমান্টিক গান শোনার চেষ্টা করি কিন্তু মনে রঙ লাগেনা, অতঃপর দুঃখের গান শোনার চেষ্টা করি মাইনাসে মাইনাসে যদি প্লাস হয় এই আশায়।

নাহ! এ্যালজেব্রার কঠিন নিয়ম সব ক্ষেত্রে চলেনা। মনটাকে তখন তার মতোই চলতে দিই, এভাবেই একটু একটু করে সময় চলে যাচ্ছে। প্রতিদিন অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী প্রিয়জন আমাকে ফোন করেন, খুব সাবধানে আমি তাদের সাথে কথা বলি যাতে তারা টের না পায় যে আমি ভালো নেই। কারণ মন খারাপটা সংক্রামক ব্যধির একটি তাই কড়া সতর্ক থাকি যাতে আমার মন খারাপের আঁচড় লেগে ভুলেও যেন অন্য কাউকে সংক্রমিত করতে না পারে। যার সাথে সম্পর্ক যেমন তার সাথে তেমন কথা বার্তা বলেই ফোনটা ছাড়ি। ফোন ছাড়ার পর মনটা আবারো বড় বেশি বেরকম খারাপ হয়ে যায়। প্রকৃতির সাথে আমার আলাদা কোন সখ্যতা নেই। প্রকৃতির সৌন্দয্য নিয়ে আমি কখনোই বাড়াবাড়িও করিনা। তবে যখন যে সৌন্দর্য্য আমার চোখের নজর কাড়ে তাকে ধরে রাখার চেষ্টা করি, তার বন্দনা করি। আমাদের একতলা বাড়ির ছাদে আমি খুব কম সময় কাটাই, প্রয়োজন ছাড়া উঠিনা কখনো। তবে রাতের ফর্সা আকাশে কখনো পূর্ণিমা এলে চেষ্টা করি পূর্ণিমা দেখতে, তখন একা একা ছাদে উঠি সাথে আইপডটা নিয়ে যাই। আকাশ, চাঁদ, পূর্ণিমা নিয়ে সংগৃহীত গানগুলো এক এক করে শুনতে থাকি।

আজকের দুপুরের আকাশে পূর্ণিমা ছিলোনা তবে চকচকে রোদ ছিলো সেই সাথে আমার মন মরা মন ছিলো। তাই কোন আয়োজন না করেই আনমনে ছাদের দিকে পা বাড়ালাম। কিন্তু ছাদে উঠেই আমার আমার চোখের সামনে যে প্রকৃতি ধরা দিলো তা যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। সাথে সাথে নীচে নেমে এসে ক্যামেরাটা নিয়ে আবারো ছাদে চলে গেলাম। আমাদের ছাদের উপর একটা বরই গাছ আছে। বরইয়ের ভারে সবগুলো ডাল মাথা নূয়ে আছে, তেমনি এক নূয়ে পড়া ডালে চিত্ত হরণ করা এক জোড়া প্রজাপতি দেখে আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না প্রজাপতি এত্তো সুন্দর হতে পারে! চটজলদি ক্যামেরার শাটারে ক্যাচ ক্যাচ শব্দে ক্লিক করে বেশ ক'টা ছবি তুলে রাখলাম। মনটা নিমিষেই ভালো হয়ে গেলো। মন যে কোন কিছুতে চট করে ভালো হতেও জানে! এটাও প্রতিটা মনের এক বিশেষ গুণ বা ক্ষমতা। প্রজাপতিটাকে হাতে নিতে খুব ইচ্ছে করলো কিন্তু  স্ব-চক্ষে এতো বড় মোটা সোটা প্রজাপতি আমার জীবনে খুব কম দেখছি বলে ভয় পেলাম কিছুটা, যদি কামড়ে দেয় রাগ করে।

ঘরে ফিরে এসে ক্যামেরা থেকে সবগুলো ছবি পিসিতে ট্রান্সফার করতে গিয়ে আবারো মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আমরা কেন প্রজাপতির মতো হতে পারিনা, কেন মুক্ত আকাশে ডানা মেলে উড়তে পারিনা, কেন এতো দুঃখ কষ্ট আমাদেরকে তাড়িয়ে বেড়ায় যে দুঃখ কষ্টের ছিটে ফোটাও তাদের রঙ্গীন ডানায় নেই এরকম হাজারো প্রশ্নের তীর মনের মাঝে এক এক করে বিঁধতে থাকে। কোন তীরই উপড়ে ফেলতে পারিনা, উপড়ানোর যত চেষ্টা করি ততই ক্ষতের সৃষ্টি হয়। শুনেছি, হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের বিশ্বাস মানুষ বার বার পূনঃজনম লাভ করে। তবে প্রতি জন্মে তারা বিভিন্ন প্রাণীরূপে পৃথিবীর বুকে পা রাখে, এমন কি প্রজাপতিরূপেও, তাহলে এই প্রজাপতিদ্বয় কি আগের জন্মে মানুষ ছিলো ? এক সময় মনের ভুলেই প্রজাপতিকে প্রশ্ন করি "ও ভাই প্রজাপতি, তুমি বলে দাও কোন জনম শ্রেয়, মানুষের নাকি প্রজাপতির ?" প্রজাপতি নিরুত্তর। কে জানে হয়তো সেও তার প্রজাপতি জীবনের সবগুলো দুঃখ কষ্টকে একত্রিত করে মন মরা মন নিয়ে আমাকেও মনে মনে একই প্রশ্ন ছুড়ে "ও ভাই মানুষ তুমিই বলে দাও কোন জনম শ্রেয়, প্রজাপতির নাকি মানুষের ? ভাবতে ভাবতে আমিও নিরুত্তর হয়ে পড়ি।

জবরুল আলম সুমন
সিলেট।
৮ই ফেব্রুয়ারী ২০১২ খৃষ্টাব্দ।

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পোস্ট পুরাতন পোস্ট হোম

    আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগতম

    নিজের লেখা দিয়ে নিজের মতো করে এই ব্লগটি সাজানোর চেষ্টা করেছি, আমার এই ব্লগটি যদি আপনাদের ভালো লাগে তবেই আমার এই শ্রম স্বার্থক হবে। ব্লগটি পরিদর্শন করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

ব্লগটি আজ দেখা হয়েছে মোট

ইতিহাসের এই দিনে

Flickr Images

2014 © জবরুল আলম সুমন কর্তৃক. Blogger দ্বারা পরিচালিত.

এক ঝলকে আমি

আমার ফটো
নিজের সম্পর্কে বলার মত সঞ্চয় আমার নেই। নিজেকে স্বচ্ছ আয়নার মতই ভাবি, আমার প্রিয় বন্ধুরা যখন আমার সামনে এসে দাঁড়ায় আমি তখন তাদের প্রতিবিম্ব মাত্র। তাতেই আমার সুখ। গান শুনতে পছন্দ করি, পছন্দ করি লিখতে আর সময় সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ি অচেনা পৃথিবীটাকে চেনার জন্য।

এই ব্লগটি সন্ধান করুন


Recent Comments