দশ ফুট বাই দশ ফুট...

যখন অনেক ছোট্ট ছিলাম সবে মাত্র অক্ষরগুলোকে যুক্ত করে শব্দ তৈরী করতে শিখেছি তখন কোত্থাও যদি "সুমন" নামটা লেখা দেখি তখন বড়ই ভালো লাগতো। দোকানের সাইন বোর্ডে, গাড়ীর গায়ে, কোন পণ্যের মোড়কে কিংবা পত্রিকার পাতায় পাতায় আনমনেই "সুমন" নামটা খোঁজে বেড়াতাম। কাংখিত নামটা খুঁজে পেলে আনন্দে লাফা-লাফি শুরু করে দিতাম। ওই সময়ের ছেলে পুলেরা ডাক টিকিট, বিদেশী মুদ্রা, ফোন কার্ড সহ বিভিন্ন শিক্ষা মূলক বস্তু সংগ্রহ করে বেড়াতো আর আমি ছাপার অক্ষরে নিজের নাম সম্বলিত যে কোন কিছুই পরম যত্নে সংগ্রহ করে বাক্সে ভরে রাখতাম !!! একদিন আমার এক আত্মীয়ের বাড়ীতে বেড়াতে গেছি, হঠাৎ টেবিলের উপর রাখা ক্যাসেটের একটা র‍্যাকের মধ্যে আমার তন্ময় চোখ দুটো আটকে গেলো। র‍্যাকের মধ্যে সাজানো একটা ক্যাসেটের গায়ে "সুমন" লেখাটা খুব সহজে পড়ে নিতে পারলেও সুমনের গা ঘেঁষা শব্দটি আয়ত্বে আনতে পারছিলাম না। অনেক কষ্টে যেটা উদ্ধার করেছিলাম তার মর্ম আবিষ্কার করে নিজেই হেসে কুটি কুটি।  কারণ যা উদ্ধার করেছিলাম তা হলো "মুখে পাদ দেয়" !!! কোন কাহিনী ছাড়াই "সুমন" নাম সম্বলিত ক্যাসেটটি আমার হস্তগত হলো। বাসায় এনে পরম যত্নে রেখে দিয়েছি তাও অনেক দিন হলো। আব্বুকে অনেক ভয় করতাম বলে আব্বুর ক্যাসেট প্লেয়ারে কখনোই হাত দিতাম না। একদিন নিজেই একটা ক্যাসেট প্লেয়ারের মালিক বনে যাই। এবার ক্যাসেট কেনার পালা শুরু হলো। হঠাৎ করেই শখের সংগ্রহে হাত দিয়ে সুমন চট্টপাধ্যায়ের "বসে আঁকো" এ্যালবামটা খুঁজে পাই। সেই থেকে সুমনের গাওয়া গান শোনা শুরু, আজো সময় পেলে সুমনের গান শুনে শুনে হৃদয়কে পুলকিত করি। সুমনের প্রায় প্রতিটা গানই আমার শোনা হয়ে গেছে। সুমনের প্রতিটা গানের মঝেই আলাদা বিশেষত্ব খুঁজে পাই যা সমকালীন অন্য কোন গায়কের মধ্যে ছিলোনা বললেই চলে। এবং সুমনের এই বিশেষত্বই তাকে সংগীত ভূবনের বিশেষ এক স্থানে পৌছে দিয়েছে যেখানে তাকে ছোঁয়া অন্যসব গায়কের জন্য কঠিন বটে। ১৯৯২ সালে সুমনের কন্ঠে প্রকাশিত "তোমাকে চাই" নামক এ্যালবামের শিরোনামের গানটা আজো সবার মুখে মুখে ফিরে। একই এ্যালবামে সুমনের গাওয়া জীবন ঘনিষ্ঠ একটা গান আমাকে আজও কাঁদায়, ভাবায়। আমার সেই অতি প্রিয় গানটা আজ সবার সাথে শেয়ার করছি। আশা করি সবার ভালো লাগবে। গানটা শোনে শোনে লিরিকটা লিখে রেখেছিলাম, তাও দিলাম। সুমনে কন্ঠে এই গানটা শোনার জন্য নিচের লিংকে ক্লিক করে ডাউনলোড করে নিন।

দশ ফুট বাই দশ ফুট

তক্ত পুষ্পা মেঝেতে বিছানা
দঁড়িতে লুঙ্গি শাড়ী তিন খানা
তারই একপাশে পড়ে আধখানা
বেওয়ারিশ বাসি বিস্কুট
দরজায় আছে নম্বর লেখা
তাই দেখে দেখে ঠিকানাটা শেখা
যদিও বাসার আসল ঠিকানা
দশ ফুট বাই দশ ফুট।

জনা চারেকের বাসা এই ঘরে
পাঁচ জন হবে কিছু দিন পরে
ঘেঁষা ঘেঁষি আর ঠেসা ঠেসি করে
গায়ে গায়ে শুধু কুট কুট
দরজায় আছে নম্বর লেখা
তাই দেখে দেখে ঠিকানাটা শেখা
যদিও বাসার আসল ঠিকানা
দশ ফুট বাই দশ ফুট।

খাওয়া বসা ঘুম একই জায়গায়
ছেলে মেয়ে দেখে আধো তন্দ্রায়
বয়স্ক দুই দেহ মিলে যায়
আঁধার ঘনালে ঘুট ঘুট
দরজায় আছে নম্বর লেখা
তাই দেখে দেখে ঠিকানাটা শেখা
যদিও বাসার আসল ঠিকানা
দশ ফুট বাই দশ ফুট।

রান্না ঘরটা খোঁড়া অজুহাত
ঘরণী সেখানে চড়িয়েছে ভাত
আরশোলাদের খুলেছে বরাত
রাতে ইঁদুরের খুট খুট
দরজায় আছে নম্বর লেখা
তাই দেখে দেখে ঠিকানাটা শেখা
যদিও বাসার আসল ঠিকানা
দশ ফুট বাই দশ ফুট।

ছেলে বড় হয়ে বেকারির গ্লানি
মেয়ে করে প্রেম বৃথা হয় রাণী
প্রেমিকের আছে টো-টো কোম্পানী
শনিবারে তারা দেয় ছুট
ছুটবে কোথায় প্রেম তাল কানা
গোপনীয়তার নেই মালিকানা
এই প্রেমিকেরও আসল ঠিকানা
দশ ফুট বাই দশ ফুট।

জবরুল আলম সুমন
সিলেট।
১৩ই অক্টোবর, ২০১০ ইংরেজী।

সুমনের কন্ঠে দশ ফুট বাই দশ ফুট গানটি শুনতে এখানে ক্লিক করুন...

নবীনতর পোস্ট পুরাতন পোস্ট হোম

    আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগতম

    নিজের লেখা দিয়ে নিজের মতো করে এই ব্লগটি সাজানোর চেষ্টা করেছি, আমার এই ব্লগটি যদি আপনাদের ভালো লাগে তবেই আমার এই শ্রম স্বার্থক হবে। ব্লগটি পরিদর্শন করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

ব্লগটি আজ দেখা হয়েছে মোট

ইতিহাসের এই দিনে

Flickr Images

2014 © জবরুল আলম সুমন কর্তৃক. Blogger দ্বারা পরিচালিত.

এক ঝলকে আমি

আমার ফটো
নিজের সম্পর্কে বলার মত সঞ্চয় আমার নেই। নিজেকে স্বচ্ছ আয়নার মতই ভাবি, আমার প্রিয় বন্ধুরা যখন আমার সামনে এসে দাঁড়ায় আমি তখন তাদের প্রতিবিম্ব মাত্র। তাতেই আমার সুখ। গান শুনতে পছন্দ করি, পছন্দ করি লিখতে আর সময় সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ি অচেনা পৃথিবীটাকে চেনার জন্য।

এই ব্লগটি সন্ধান করুন


Recent Comments