অভিনব প্রতারণা...

সময় সকাল ১০টা ১৭ মিনিট >>>
০১৭৪****...... ক্রিং ক্রিং ক্রিং
- হ্যালো, হ্যালো কে বলছেন ?
- শুভ সকাল, স্যার আমি গ্রামীণ ফোন কাস্টমায় কেয়ার থেকে বলছি।
- জ্বি বলুন।
- প্রথমেই আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি, গ্রামীণ ফোনের ১৫ বর্ষ পূর্তি উদযাপন উপলক্ষ্যে আপনার এই নাম্বারটা র‍্যান্ডম সিলেকশানের মাধ্যেমে ৭৫ হাজার টাকা জিতে নিয়েছে।
- ওয়াও, তাই নাকি ?
- জ্বি স্যার। এখন আপনাকে যা করতে হবে তা হলো আপনার এই মোবাইলে ৬০০ টাকার স্ক্র্যাচ কার্ড দিয়ে আপনার এ্যাকাউন্ট রিচার্জ করতে হবে।
- ঠিক আছে আমি ফ্লেক্সিলোডে ৬০০টাকা রিচার্জ করে নেবো।
- না স্যার, ফ্ল্যাক্সি লোডে করলে হবেনা। এটা আমাদের সিস্টেম একসেপ্ট করবেনা আপনাকে ১০০টাকার ছয়টা কার্ড কিনে নাম্বারগুলো আমাদেরকে দিয়ে দিবেন আমরাই সিস্টেম থেকে আপনার এ্যাকাউন্টে রিচার্জ করিয়ে দেবো।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
- আজকের মধ্যেই খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে স্যার, নইলে আমাদের সিস্টেম একসেপ্ট করবেনা।
- আচ্ছা ঠিক আছে।


সময় দুপুর ১২টা ০৩ মিনিট >>>
০১৭৪****...... ক্রিং ক্রিং ক্রিং
- হ্যালো, হ্যালো কে বলছেন ?
- শুভ দুপুর... স্যার আমি গ্রামীণ ফোন কাস্টমায় কেয়ার থেকে বলছি, সকালে আরো একবার আপনাকে ফোন করেছিলাম।
- ও হ্যা... কেমন আছেন আপনি ?
- জ্বি স্যার ভালো আছি। স্যার আপনি কি কার্ড কিনে এনেছেন ?
- না এখনো কিনিনি, বাসা থেকে বের হতে পারছিনা, বের হলে কিনে নিয়ে আসবো।
- কতক্ষণ লাগবে স্যার ?
- এখনো বলতে পারছিনা তবে ঘন্টা দেড়েক লাগতে পারে।
- ঠিক আছে স্যার আমি আপনাকে দুই ঘন্টা পরে আবার কল দিবো। ধন্যবাদ স্যার।
- ধন্যবাদ আপনাকেও।


সময় বেলা ২টা ৩৯ মিনিট >>>
০১৭৪****...... ক্রিং ক্রিং ক্রিং
- হ্যালো... কেমন আছেন ? (ততক্ষণে নাম্বারটা মুখস্ত হয়ে গেছে)
- শুভ অপরাহ্ন... স্যার আমি গ্রামীণ ফোন কাস্টমায় কেয়ার থেকে বলছি...
- হ্যা, আমি চিনতে পেরেছি।
- স্যার আপনি কি স্ক্র্যাচ কার্ড কিনেছেন ?
- না আমি এখনো বাসা থেকে বের হতে পারিনি।
- স্যার সময় কিন্তু আমাদের হাতে বেশি নেই। আপনি যদি আরো এক ঘন্টার মধ্যে স্ক্র্যাচ কার্ড কিনে আপনার এ্যাকাউন্ট রিচার্জ না করেন তাহলে আপনার উপহারের টাকা বাতিল হয়ে যাবে।
- না না না, বাতিল করবেন না প্লিজ... আমি এক ঘন্টার মধ্যে কিনে আনবো। ও হ্যা এই টাকা আমি কিভাবে পাবো ?
- এটা আপনি দুই ভাবে ব্যবহার করতে পারেন আপনি চাইলে আপনার মোবাইল এ্যাকাউন্টে নিতে পারেন কথা বলার জন্য অথবা আপনার ব্যাংক এ্যাকাউন্ট দিবেন সেখানে সাথে সাথে জমা হয়ে যাবে।
- তথ্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি একটু পরে কার্ড কিনতে যাবো।
- ঠিক আছে স্যার আমি আপনাকে হাফ অন আওয়ারের মধ্যে আবার কল দিচ্ছি।
- ঠিক আছে...


সময় বেলা ৩টা ৭ মিনিট >>>
০১৭৪****...... ক্রিং ক্রিং ক্রিং
- হ্যালো... একটা সমস্যা হয়ে গেছে!
- কি সমস্যা হয়েছে স্যার ?
- আমাদের এখানে স্ক্র্যাচ কার্ড পাওয়া যাচ্ছেনা।
- স্ক্র্যাচ কার্ড পাওয়া না গেলে ত সমস্যা, আপনি একটু অপেক্ষা করুন আমি আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে দেখি আপনার জন্য কি করা যায়। আপনি লাইনে থাকুন। (লাইন হোল্ড করে মিনিট খানেকের পর ফিরে এলো) স্যার আপনাকে আরেকবার অভিনন্দন জানাই যে আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে ঠিক করেছি যে আমি যে নাম্বার থেকে কথা বলছি এই নাম্বারেই আপনি ফ্লেক্সিলোড করেই ৬০০টাকা পাঠিয়ে দিতে পারেন তাহলে আমরা সেটাকে একসেপ্ট করে নেবো।
- আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে আমি আপনার এই নাম্বারে ফ্লেক্সি করে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি।
- ঠিক আছে স্যার, আমি তাহলে আপনার ফ্লেক্সির টাকা পাওয়ার সাথে সাথে আপনাকে ফোন করে এনশিউর করবো।
- ঠিক আছে।


রাত ৮টা ২৩ মিনিট >>>
০১৭৪****...... ক্রিং ক্রিং ক্রিং
- হ্যালো...
- স্যার আমি কিন্তু এখনো আপনার টাকা পাইনি।
- টাকা পাননি মানে ? আমি ত টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি।
- স্যার আমাদের মোবাইলে এখনো আসেনি, আপনি কি দয়া করে যেখান থেকে ফ্লেক্সি করেছেন সেখানে আরো একবার যোগাযোগ করবেন ? আমি আপনাকে আরো দশ মিনিট পর ফোন করছি।
- আচ্ছা ঠিক আছে আমি এখুনি খবর নিচ্ছি।
- ঠিক আছে স্যার আমি তাহলে আপনাকে দশ মিনিট পরে ফোন করছি।

দশ মিনিট পরঃ
- হ্যালো...
- জ্বি স্যার...
- আমি তাদের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম তারা বললো যে টাকাটা পাঠিয়ে দিয়েছে।
- না স্যার আমরা এখনো টাকা পাইনি।
- ওহ! তাহলে ত সমস্যা। আচ্ছা এক কাজ করা যায় ?
- কি স্যার ?
- আমি কত টাকা জিতেছি ?
- ৭৫ হাজার টাকা স্যার।
- আসলে আমার এতো টাকার দরকার নেই, আমার এই উপহারের টাকা থেকে আপনি ফিফিটি পার্সেন্ট মানে ৩৭ হাজার পাঁচশ টাকা রেখে দিন বাকি টাকা আমার এই নাম্বারে ফ্লেক্সি করে পাঠিয়ে দিন আর বিনিময়ে আপনি আপনার পকেট থেকে ৬০০টাকা রিচার্জ করে নিন। আমার মনে হয় বিষয়টাতে আপনি দ্বিমত করবেন না। আমি খুশী হয়েই আপনাকে দিলাম।
- স্যার এটা আমাদের সিস্টেমের মধ্যে পড়েনা। আমি অপারগতা প্রকাশ করছি।
- আপনি আপনার উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে দেখুন আশা করি একটা উপায় বের হবে, আগে যেমন করে হলো। আমার পক্ষে কিন্তু আর ৬০০টাকা দেয়া সম্ভব নয়।
- ঠিক আছে স্যার আমি আপনাকে পরে কল দিচ্ছি।
- আচ্ছা ঠিক আছে।

উপরের সম্পূর্ণ কথোপকথনটি ঘটেছে আমার সাথে গতকাল। বিষয়টি সম্পর্কে আমার আগে থেকেই কিছুটা জানা ছিলো তাই আমি তার প্রতারণার ফাঁদে পা দিইনি, আমি তার সাথে খুবই সুক্ষ্ণ ভাবে মজা করছিলাম যা সে প্রথমে ধরতে পারেনি। কিন্তু অনেকেই তাদের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এটা শুধু গ্রামীণ ফোন ব্যবহারকারীদের জন্যই নয় বরং প্রত্যেক অপারেটরের মোবাইল ব্যবহারকারীর যে কেউই এই ধরণের প্রতারণার শিকার হতে পারেন। তাই আমি আশা করবো আমাদের বন্ধুদের মধ্যে কেউ যেন এধরনের প্রতারণার ফাঁদে পা না দেন এবং বিষয়টি আপনার বন্ধুর সাথেও শেয়ার করুন।

জবরুল আলম সুমন
সিলেট।
১৩ই মার্চ ২০১২ খৃষ্টাব্দ।

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পোস্ট পুরাতন পোস্ট হোম

    আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগতম

    নিজের লেখা দিয়ে নিজের মতো করে এই ব্লগটি সাজানোর চেষ্টা করেছি, আমার এই ব্লগটি যদি আপনাদের ভালো লাগে তবেই আমার এই শ্রম স্বার্থক হবে। ব্লগটি পরিদর্শন করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

ব্লগটি আজ দেখা হয়েছে মোট

ইতিহাসের এই দিনে

Flickr Images

2014 © জবরুল আলম সুমন কর্তৃক. Blogger দ্বারা পরিচালিত.

এক ঝলকে আমি

আমার ফটো
নিজের সম্পর্কে বলার মত সঞ্চয় আমার নেই। নিজেকে স্বচ্ছ আয়নার মতই ভাবি, আমার প্রিয় বন্ধুরা যখন আমার সামনে এসে দাঁড়ায় আমি তখন তাদের প্রতিবিম্ব মাত্র। তাতেই আমার সুখ। গান শুনতে পছন্দ করি, পছন্দ করি লিখতে আর সময় সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ি অচেনা পৃথিবীটাকে চেনার জন্য।

এই ব্লগটি সন্ধান করুন


Recent Comments