স্বাধীনতার গান

তখন ক্লাস সিক্স অথবা সেভেনে পড়ি। শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, বাংলা নববর্ষ, পহেলা ফাল্গুনসহ নানান রকম উৎসব এলেই আমাদের স্কুলে বিভিন্ন জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে তা যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হতো, এখনো হয়। পাঁচ সাত দিন আগে থেকেই একটা উৎসব উৎসব ভাব থাকতো সবার মধ্য। প্রিয় স্যার তপন কুমার দাস (বর্তমানে বাংলাদেশ বেতারে কর্মরত) সকল আয়োজনের কান্ডারী ছিলেন। কারা কারা পারফর্ম করবে, অনুষ্ঠানসূচীতে কি কি থাকবে তিনি তা নির্ধারণ করে দিতেন। তিনি নিজেও গাইতেন, বাজাতেন কখনো উপস্থাপনার দায়িত্বেও থাকতেন। তেমনি করে কোন এক দিবস (সম্ভবত স্বাধীনতা দিবস) উদযাপন করার চার/পাঁচ দিন আগে স্যার আমাকে ডেকে বললেন তোমাকে একটা দলীয় সঙ্গীত লিখতে হবে, এবং দলীয় সঙ্গীতে তোমাকেও পারফর্ম করতে হবে। আমার ত মাথায় হাত, তখনো বাথরুমে বসে নীচু স্বরে টুকটাক গলা সাধলেও জীবনে কারো চোখ চোখ রেখে কোন গানের লাইনও আওড়াইনী! আর সেই আমি কিনা গাইবো! স্যারকে বললাম, স্যার আমি কখনো গান গাইনি, সুরে সুরে আমি গাইতে পারিনা। স্যার তখন অভয় দিয়ে বললেন কোন অসুবিধা নেই, আগে তুমি একটা গান লিখে আনো তারপর দেখা যাবে।

আমার ত মাথা খারাপ অবস্থা, কি লিখবো, কিভাবে লিখবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা। ভাবতে ভাবতেই দুই দিন চলে গেলো। স্যারের বিশ্বাস ছিলো আমাকে দিয়ে আর কিছু না হলেও গান টান লেখা হবে কারণ তখনকার সময়ের জনপ্রিয় দৈনিক বাংলাবাজার ইতিমধ্যে আমার দুই তিনটা কবিতা ছেপে দিয়ে স্যারসহ অনেকের কাছে আমাকে লেখক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। স্কুলের যেকোন প্রকাশনাতেও আমার লেখা ছিলো নিয়মিত। সেকারণেই স্যার আমাকে গান লেখার দায়িত্বটুকু দিলেন। আমি টুক টাক লেখা লেখিতে যুক্ত থাকলেও ফরমায়েশী লেখাতে মোটেও পারদর্শী নই, আমি লিখি আমার ইচ্ছে মতো, যা ভালো লাগে তাই লিখি তবুও স্যারের আবদার মেটাতে ভালো মন্দ যাই হোক একটা কিছু লিখে দিতে হবে, নইলে মান ইজ্জত আর থাকবেনা। অবশেষে একটা কিছু দাঁড় করালাম। স্যার লেখাটা পেয়ে বেশ খুশি হলেন, তিনি সযত্নে সুর দিলেন এবং স্যারের নির্দেশ মতো আমাকেও মঞ্চে উঠতে হলো অন্যান্য অনেকের সাথে। সবাই গাইছিলো স্যারের সুরে আর আমি শুধু ঠোঁট নেড়েই পার পেয়েছিলাম। আমার সেই ছোট্ট বেলার লেখাটি অনেক দিন যত্ন করে রাখলে হঠাৎ করেই হারিয়ে যায়। আজ কিছু পুরোনো বই খাতা ঝাড়তে গিয়ে লেখাটা পেয়ে গেলাম। তাই সবার সাথে শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না।


সালাম সালাম সালাম
সালাম সালাম সালাম। ২বার
লাখো শহীদের পদতলে
সিক্ত নয়নের নোনা জলে,
যারা সূর্য্যটা এনে দিলো মুক্ত গগনে
তাদের জানাই সালাম। ঐ

লাল সবুজের রঙে ঐ পতাকা
রক্তের চিহ্নে স্বপ্ন আঁকা। ২বার
লাখো শহীদের আত্মদানে
স্বাধীন ভূমি পেলাম। ঐ (সালাম...)

উজ্জ্বল দিনগুলি সামনে রেখে
চলবো এগিয়ে মোরা সুখে দুঃখে। ২বার
স্বাধীনতার রূপ চেতনায়
নিজেকে আজ রাঙালাম। ঐ

মুক্তির জয়গানে বুক রাঙাবো
স্বাধীন ভূমির এই দেশ সাজাবো। ২বার
এক হও মনে প্রাণে সব জনতা
রাখবো দেশের সম্মান। ঐ

জবরুল আলম সুমন
সিলেট।
২০শে ডিসেম্বর, ২০১২ খৃষ্টাব্দ।

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পোস্ট পুরাতন পোস্ট হোম

    আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগতম

    নিজের লেখা দিয়ে নিজের মতো করে এই ব্লগটি সাজানোর চেষ্টা করেছি, আমার এই ব্লগটি যদি আপনাদের ভালো লাগে তবেই আমার এই শ্রম স্বার্থক হবে। ব্লগটি পরিদর্শন করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

ব্লগটি আজ দেখা হয়েছে মোট

ইতিহাসের এই দিনে

Flickr Images

2014 © জবরুল আলম সুমন কর্তৃক. Blogger দ্বারা পরিচালিত.

এক ঝলকে আমি

আমার ফটো
নিজের সম্পর্কে বলার মত সঞ্চয় আমার নেই। নিজেকে স্বচ্ছ আয়নার মতই ভাবি, আমার প্রিয় বন্ধুরা যখন আমার সামনে এসে দাঁড়ায় আমি তখন তাদের প্রতিবিম্ব মাত্র। তাতেই আমার সুখ। গান শুনতে পছন্দ করি, পছন্দ করি লিখতে আর সময় সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ি অচেনা পৃথিবীটাকে চেনার জন্য।

এই ব্লগটি সন্ধান করুন


Recent Comments