আজ আমার জন্মদিন
আজ আমার জন্মদিন। কালের অথৈ গহ্ববরে নিমজ্জিত হওয়া বেশ কয়েক বছর আগের এমনি একটি দিনে আমি পৃথিবীর আলো বাতাস প্রথম স্পর্শ করি। নিশ্চয় সেই দিনের জন্ম ক্ষণে আমি গলা ফাটিয়ে কান্না করেছিলাম আর আমার জন্মদাত্রী-জন্মদাতা দ্বয় আমার কান্নাকে উপেক্ষা করে হাসি মুখে পরমানন্দে আমার ভবিষ্যত লক্ষ্য নির্ধারণে ছিলেন অতি ব্যস্ত। আমার মুখে কান্না ছাড়া আর কোন ভাষা ছিলোনা। ছলছল চোখে হয়ত দেখেছিলাম চারপাশটাকে আর অবাক দৃষ্টিতে সব কিছু পরখ করতে করতে আবার হয়ত কান্না, কান্নাই যে তখন একমাত্র ভাষা। আমার বাবা-মা আমার কান্নাকে হয়ত আমার ক্ষুধার্তের সংকেত হিসেবে ধরে নিয়েছিলো তাই কোন খাবার আমার জন্য যুতসই সেটাই খুঁজতে কিংবা যোগাড় করতে তাঁরা ছিলেন মরিয়া অথচ তাঁরা কেউই প্রশ্ন করেনি আমার কান্নার পেছনে কি রহস্য
প্রোতিত ছিলো ! আমি হয়ত সেদিন কেঁদেছিলাম এই ভেবে আমাকে যে পৃথিবীতে স্থানান্তর করা হলো তা আমার জন্য মোটেই বাস যোগ্য নয়, আমিতো আমার পূর্ববর্ত্তী স্থানেই ভালো ছিলাম। কোন অপরাধে আমাকে জোর করে তোমরা এই বীভৎস পৃথিবীতে ডেকে আনলে ? এই বিশাল প্রশ্নের ভার সইতে না পেরে হয়তো ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম আর সবাই ভাবলো এই বুঝি ক্ষুধা মিটেছে !
সময়তো কোন সরকারী অফিসের টেবিলে ধূলোয় মোড়ানো কোন ফাইল নয় যে আটকে থাকবে তাইতো চলন্ত সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আমার ক্ষুদ্র শরীরটা বাড়তে শুরু করলো। শক্তি জমতে লাগলো আমার কোমরে আর তাই কোমরের উপর ভর করে শিখতে কিভাবে বসতে হয়। ততক্ষণে হাত আর পা গুলো চঞ্চল হতে শিখে গেছে, শুধু বসে থেকেই ক্ষান্ত হয়নি সামনে যা পাই তাকেই আঁকড়ে ধরে দাঁড়াতে ইচ্ছে করে। হোচট খেতে খেতে হাঁটতে শেখা, বাবা-মা'রা তখন কি নির্দয় হয় ! পড়ে গিয়ে কোথায় ব্যাথা পেলাম তা দেখার সময় তাঁদের নেই। ইস কিংবা উঁফ শব্দ দ্বয়ের কোন একটি দিয়ে তাদের দরদ প্রকাশ করে আবার আমাকে হাঁটতে তাড়া দেন। আমিও শিখে গেছি কিভাবে হাঁটতে হয় সেই সাথে ভুলে গেছি জন্মক্ষণের কান্নার অন্তরালের ইতিহাস। তখন আমার চোখে আস্তে আস্তে দানা বাধতে শুরু করেছে স্বপ্নেরা। যা-ই দেখি তাই করতে ইচ্ছে করে তাই হতে ইচ্ছে করে। বই খাতা নিয়ে ইস্কুলে পড়তে গেছি অথচ আমার মন পাঠ্য বইয়ে সীমাবদ্ধ নয়, মাস্টার মশাইয়ের পড়ানোর ভঙ্গিমা দেখে আমার মনে সাধ জাগলো শিক্ষক হবার ! বাড়িতে ফিরে এসে আম গাছ আর কাঁঠাল গাছকে বানালাম আমার ছাত্র/ছাত্রী। বেত দিয়ে তাদের অনেক পিঠিয়েছি কিন্তু তাঁরা কেউ কাঁদেনি অথচ শ্রেনী কক্ষে আমার পাশে বসা ছেলেটা মাস্টার মশাইয়ের আগুন রাঙ্গা চোখ দেখেই তাঁর নতুন প্যান্টটা ভিজিয়ে দিয়েছিলো ! টিভি সেটের সামনে বসে নাটক দেখছি কিন্তু নাটক মানে কি আমার জানা ছিলোনা, দেখেই আনন্দ পাচ্ছি। বড়দের ভাব লক্ষ্য করে হাসি কিংবা কান্নার ভান করছি আমার সেই ভানের অন্তরালে ছিলো টেলিভিশনের পর্দার ভেতরের মানুষ হবার স্বপ্ন। তেমনি ভাবে কত যে স্বপ্ন দেখেছি আবার গলা টিপে সেই স্বপ্নের দলকে হত্যা করেছি তার কোন পরিসংখ্যান নেই। আজ অবধি কত শত স্বপ্নকে জন্ম দেই হত্যা করার লক্ষ্যে। লালিত স্বপ্নকে ধ্বংশ করতে সবাই পারেনা। আমি না পারার দলে আটকে থাকতে চাইনা, কিছু একটা করি হোকনা সেটা স্বপ্ন ধ্বংশ ! তাতে কি ? বয়সের ঝুড়ি ক্রমান্বয়ে ভারী হতে লাগলো। পাঠশালার পাঠ চুকিয়ে বিদ্যাশালা পাল্টানোর পর বার বার আয়নাতে তাকাতাম, নাকের নিচের লোম গুলো কবে কালো হবে ?
আজ আমার জন্মদিন। একটা সময় ছিলো যখন আমি এই পৃথিবীর অনেক কিছুই জানতাম না। যদিও এখনো অনেক কিছুই জানিনা। কেননা সেই সময়ে জানার পরিধি ছিলো অল্প তারচেয়েও আমার মনের প্রশ্নগুলো। সেই সময় জন্মদিন এলে সে কি আনন্দ আর উচ্ছ্বাস যা এখনো রোমন্থন করি। সংসারে দাদু ছিলো চাচা-চাচী আর আশ-পাশের মানুষগুলো নিয়ে বিশাল পরিবার। বাড়ীর সামনের উঠোনটা ছোট্ট হলেও জায়গা অনেক বেশী ছিলো ধূলো বালি উড়িয়ে খেলা করার আনন্দ গোটা কয়েক অক্ষরে কিংবা শব্দে প্রকাশ করার নয়। সেই উঠোনটা ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে ইট আর কংক্রিটের ভারে। দাদু অনেক আগেই গত হয়েছেন, দাদী অসাড় হয়ে মৃত্যু শয্যায় আর চাচারা তাদের পরিবার নিয়ে লন্ডন আর নিউ ইয়র্কের ছোট্ট ছোট্ট ফ্লাটে বন্দী ! থেকে গেলাম আমরা কিংবা আমি। চেনা জানা অনেক মানুষকেই আজ আর হাত বাড়িয়ে ছুতে পারিনা। শৈশব মিলিয়ে যেতে যেতে শেষ হতে লাগলো আমার অনেক স্বপ্ন কিংবা তীব্র ইচ্ছাগুলো। সময়ের সাথে সাথে আমিও পাল্টাতে শুরু করি, নতুন নতুন আশাকে পুঁজি করে প্রতিদিন নতুন করে পথ চলার চেষ্টা করে যাই। আমি বড়ই ধৈর্য্যহীন ! কখনোই কোন দিন আমি আমার স্বপ্ন কিংবা আশার সর্বোচ্চ শিখরে যেতে পারিনি আমার অধৈর্য্যতার জন্য হয়তো কোনদিন যাওয়াও হবেনা !
আজ আমার জন্মদিন। কতটা শীত বসন্ত পেরেয়েছি তা হাতের আঙ্গুলে গুনতে চাইনা। শুধু জানতে চাই এই জীবন থেকে যে সময় টুকু ঝরে গেলো তা কি ফিরিবার নয় ? যাপিত জীবনের ডায়েরীর পাতা উল্টালে সুখ দুঃখ হাসি কান্নার গড় কিছুটা বের হয়ে আসে, তাতে সুখী কিংবা দুঃখীর মাত্রা নির্ধারণ করা হয়ত সম্ভব সেই মাত্রা দিয়ে কি রয়ে যাওয়া ভবিষ্যত সাজানো যাবে ? গত দুই দিন থেকে দেশ বিদেশ হতে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজনদের শুভেচ্ছা বাণীতে আমি বার বার সিক্ত হচ্ছি। আমার জন্য তাদের এত্তো ভালোবাসা জমানো তা আমার জন্মদিন এলেই নতুন করে বুঝতে পারি। সুহৃদদের কাছ থেকে প্রাপ্ত আমার সকল ভালোবাসা, স্নেহ, শ্রদ্ধার সবটুকুই আজ আমি উৎসর্গ করে দিলাম আমার দেশের সেইসব মানুষদের তরে যারা জানেনা জন্মদিন কি ! এক মুঠো খাবারের আশায় যারা পার করে দেয় জীবনের সবটুকু দিন, যাদের কাছে সুখ মানে হলো এক টুকরো পোড়া রুটি কিংবা এক মুঠো এঁটো খাবার। তাঁদের বুভুক্ষিত চাহনি উপেক্ষা করে জন্মদিনকে জমকালো করা আমার রুচিতে রুচেনা।
প্রোতিত ছিলো ! আমি হয়ত সেদিন কেঁদেছিলাম এই ভেবে আমাকে যে পৃথিবীতে স্থানান্তর করা হলো তা আমার জন্য মোটেই বাস যোগ্য নয়, আমিতো আমার পূর্ববর্ত্তী স্থানেই ভালো ছিলাম। কোন অপরাধে আমাকে জোর করে তোমরা এই বীভৎস পৃথিবীতে ডেকে আনলে ? এই বিশাল প্রশ্নের ভার সইতে না পেরে হয়তো ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম আর সবাই ভাবলো এই বুঝি ক্ষুধা মিটেছে !
সময়তো কোন সরকারী অফিসের টেবিলে ধূলোয় মোড়ানো কোন ফাইল নয় যে আটকে থাকবে তাইতো চলন্ত সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আমার ক্ষুদ্র শরীরটা বাড়তে শুরু করলো। শক্তি জমতে লাগলো আমার কোমরে আর তাই কোমরের উপর ভর করে শিখতে কিভাবে বসতে হয়। ততক্ষণে হাত আর পা গুলো চঞ্চল হতে শিখে গেছে, শুধু বসে থেকেই ক্ষান্ত হয়নি সামনে যা পাই তাকেই আঁকড়ে ধরে দাঁড়াতে ইচ্ছে করে। হোচট খেতে খেতে হাঁটতে শেখা, বাবা-মা'রা তখন কি নির্দয় হয় ! পড়ে গিয়ে কোথায় ব্যাথা পেলাম তা দেখার সময় তাঁদের নেই। ইস কিংবা উঁফ শব্দ দ্বয়ের কোন একটি দিয়ে তাদের দরদ প্রকাশ করে আবার আমাকে হাঁটতে তাড়া দেন। আমিও শিখে গেছি কিভাবে হাঁটতে হয় সেই সাথে ভুলে গেছি জন্মক্ষণের কান্নার অন্তরালের ইতিহাস। তখন আমার চোখে আস্তে আস্তে দানা বাধতে শুরু করেছে স্বপ্নেরা। যা-ই দেখি তাই করতে ইচ্ছে করে তাই হতে ইচ্ছে করে। বই খাতা নিয়ে ইস্কুলে পড়তে গেছি অথচ আমার মন পাঠ্য বইয়ে সীমাবদ্ধ নয়, মাস্টার মশাইয়ের পড়ানোর ভঙ্গিমা দেখে আমার মনে সাধ জাগলো শিক্ষক হবার ! বাড়িতে ফিরে এসে আম গাছ আর কাঁঠাল গাছকে বানালাম আমার ছাত্র/ছাত্রী। বেত দিয়ে তাদের অনেক পিঠিয়েছি কিন্তু তাঁরা কেউ কাঁদেনি অথচ শ্রেনী কক্ষে আমার পাশে বসা ছেলেটা মাস্টার মশাইয়ের আগুন রাঙ্গা চোখ দেখেই তাঁর নতুন প্যান্টটা ভিজিয়ে দিয়েছিলো ! টিভি সেটের সামনে বসে নাটক দেখছি কিন্তু নাটক মানে কি আমার জানা ছিলোনা, দেখেই আনন্দ পাচ্ছি। বড়দের ভাব লক্ষ্য করে হাসি কিংবা কান্নার ভান করছি আমার সেই ভানের অন্তরালে ছিলো টেলিভিশনের পর্দার ভেতরের মানুষ হবার স্বপ্ন। তেমনি ভাবে কত যে স্বপ্ন দেখেছি আবার গলা টিপে সেই স্বপ্নের দলকে হত্যা করেছি তার কোন পরিসংখ্যান নেই। আজ অবধি কত শত স্বপ্নকে জন্ম দেই হত্যা করার লক্ষ্যে। লালিত স্বপ্নকে ধ্বংশ করতে সবাই পারেনা। আমি না পারার দলে আটকে থাকতে চাইনা, কিছু একটা করি হোকনা সেটা স্বপ্ন ধ্বংশ ! তাতে কি ? বয়সের ঝুড়ি ক্রমান্বয়ে ভারী হতে লাগলো। পাঠশালার পাঠ চুকিয়ে বিদ্যাশালা পাল্টানোর পর বার বার আয়নাতে তাকাতাম, নাকের নিচের লোম গুলো কবে কালো হবে ?
আজ আমার জন্মদিন। একটা সময় ছিলো যখন আমি এই পৃথিবীর অনেক কিছুই জানতাম না। যদিও এখনো অনেক কিছুই জানিনা। কেননা সেই সময়ে জানার পরিধি ছিলো অল্প তারচেয়েও আমার মনের প্রশ্নগুলো। সেই সময় জন্মদিন এলে সে কি আনন্দ আর উচ্ছ্বাস যা এখনো রোমন্থন করি। সংসারে দাদু ছিলো চাচা-চাচী আর আশ-পাশের মানুষগুলো নিয়ে বিশাল পরিবার। বাড়ীর সামনের উঠোনটা ছোট্ট হলেও জায়গা অনেক বেশী ছিলো ধূলো বালি উড়িয়ে খেলা করার আনন্দ গোটা কয়েক অক্ষরে কিংবা শব্দে প্রকাশ করার নয়। সেই উঠোনটা ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে ইট আর কংক্রিটের ভারে। দাদু অনেক আগেই গত হয়েছেন, দাদী অসাড় হয়ে মৃত্যু শয্যায় আর চাচারা তাদের পরিবার নিয়ে লন্ডন আর নিউ ইয়র্কের ছোট্ট ছোট্ট ফ্লাটে বন্দী ! থেকে গেলাম আমরা কিংবা আমি। চেনা জানা অনেক মানুষকেই আজ আর হাত বাড়িয়ে ছুতে পারিনা। শৈশব মিলিয়ে যেতে যেতে শেষ হতে লাগলো আমার অনেক স্বপ্ন কিংবা তীব্র ইচ্ছাগুলো। সময়ের সাথে সাথে আমিও পাল্টাতে শুরু করি, নতুন নতুন আশাকে পুঁজি করে প্রতিদিন নতুন করে পথ চলার চেষ্টা করে যাই। আমি বড়ই ধৈর্য্যহীন ! কখনোই কোন দিন আমি আমার স্বপ্ন কিংবা আশার সর্বোচ্চ শিখরে যেতে পারিনি আমার অধৈর্য্যতার জন্য হয়তো কোনদিন যাওয়াও হবেনা !
আজ আমার জন্মদিন। কতটা শীত বসন্ত পেরেয়েছি তা হাতের আঙ্গুলে গুনতে চাইনা। শুধু জানতে চাই এই জীবন থেকে যে সময় টুকু ঝরে গেলো তা কি ফিরিবার নয় ? যাপিত জীবনের ডায়েরীর পাতা উল্টালে সুখ দুঃখ হাসি কান্নার গড় কিছুটা বের হয়ে আসে, তাতে সুখী কিংবা দুঃখীর মাত্রা নির্ধারণ করা হয়ত সম্ভব সেই মাত্রা দিয়ে কি রয়ে যাওয়া ভবিষ্যত সাজানো যাবে ? গত দুই দিন থেকে দেশ বিদেশ হতে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজনদের শুভেচ্ছা বাণীতে আমি বার বার সিক্ত হচ্ছি। আমার জন্য তাদের এত্তো ভালোবাসা জমানো তা আমার জন্মদিন এলেই নতুন করে বুঝতে পারি। সুহৃদদের কাছ থেকে প্রাপ্ত আমার সকল ভালোবাসা, স্নেহ, শ্রদ্ধার সবটুকুই আজ আমি উৎসর্গ করে দিলাম আমার দেশের সেইসব মানুষদের তরে যারা জানেনা জন্মদিন কি ! এক মুঠো খাবারের আশায় যারা পার করে দেয় জীবনের সবটুকু দিন, যাদের কাছে সুখ মানে হলো এক টুকরো পোড়া রুটি কিংবা এক মুঠো এঁটো খাবার। তাঁদের বুভুক্ষিত চাহনি উপেক্ষা করে জন্মদিনকে জমকালো করা আমার রুচিতে রুচেনা।