আকন্ঠ ডুবে আছি নীলকন্ঠে
বই মেলায় যাওয়া হচ্ছেনা গত দুবছর থেকে, তাতে কি! এবার কিন্তু বই মেলা আমার দ্বারে এসেছে প্যাকেটবন্দি হয়ে প্রিয় মনিকা আপুর বদান্যতায়। স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো নীল আর সাদা রংয়ের ম্যাকাপ করা প্যাকেটের ভেতর থেকে তরতাজা বইয়ের ঘ্রাণে আমার মনটা ভরে উঠেছিলো যখন প্যাকেটটা আমার হাতে এসে পৌছায়। প্যাকেটটা ছিঁড়তে বড্ড মায়া লাগছিলো কিন্তু না ছিঁড়ে উপায় নেই কারণ এর ভেতরে আমার জন্য আরোও বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছিলো। বড় যত্নে প্যাকেটটা খুললাম। তিন তিনটা জলজ্যান্ত বইয়ের স্পর্শ পেলাম মুহুর্তেই, এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার নয়। মজার ব্যাপার হলো তিনটা বইয়ের কভারেই স্বতন্ত্র তিনটা প্রাইম কালারের মিশ্রণে প্রচ্ছদ আঁকা। লাল, নীল এবং হলুদ ! এটা আরেকটা বিস্ময় আমার কাছে।
কোনটা ছেড়ে কোনটা আগে পড়বো তা নির্ধারণ করতে পারছিলাম না। যখনি আমি সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগী তখনি একটা লটারীর ব্যবস্থা করি এই ক্ষেত্রেও হলো তাই। ডান হাতের তর্জনী, মধ্যমা ও অনামিকার ঘাড়ে আলাদা করে তিনটা বইয়ের নাম চাপালাম মনে মনে তারপর আমার দু বছর বয়েসী ভাতিজী নুসরাতকে ডাকলাম প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় নির্বাচন করে রায় ঘোষণার জন্য। সে প্রথমে এসেই মধ্যমা নির্বাচন করলো। মৌ'দি তুমি প্রথম হয়েছো !! এবার রেজওয়ান ভাই ও তুবা আপুর পালা। এই মানিক জোড়কে আলাদা করে কাকে প্রথমে রাখে তা জানার জন্য মধ্যমা আঙ্গুল লুকিয়ে বাকি দুটো তার সামনে রাখলাম কিন্তু সে কিছুতেই আর অন্য আঙ্গুল ধরবে না! লুকানো মধ্যমাতেই তার চোখ আটকে আছে। চকোলেটের লোভ দেখালাম কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। দিলাম একটা চড়! আজকালকার ছেলে পুলেরা এতো ফাজিল হয়ে জন্মায় কেন কে জানে! ভেঁ ভেঁ করে কেঁদে সে চলে গেলো। আমি মহা যন্ত্রণায় পড়ে গেলাম, লটারীতে স্থূল কারচুপি হয়েছে বলে বাতিল করে দিলাম। এবার নিজে নিজেই নির্ধারণ করবো। তিনটা আলাদা কাগজে একটা করে তিনটা বইয়ের নাম লিখে শাফল করে ফ্লোরে ফেলে দিলাম তারপর একটা একটা করে তুললাম। এবার আমি প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পেয়ে গেছি! কিন্তু স্বীকার করছি পড়তে গিয়ে নিয়মে আটকে থাকতে পারিনি এক সাথে তিনটি বইতেই সমান তালে চষে বেড়িয়েছি।
গোগ্রাসে গিলে যে বইটা শেষ করেছি তার নাম "নীল কন্ঠ" লেখক সুপ্রিয় শ্রদ্ধেয় বড় ভাই মুনীব রেজওয়ান। নীল কন্ঠ নাম ধারণ করে তিনি ফেসবুকে সবার ফেস টু ফেস হয়ে তার অসাধারণ ব্যক্তিত্ব দিয়ে সবার নজর কেড়েছেন, হয়েছেন সর্বজনবিদিত প্রিয়ভাজন। তার প্রেরণাদায়ী মন্তব্যে মুর্খরাও কলম ধরতে বাধ্য হয়, হয়ে উঠে কবি বা লেখক এমন কি আবৃত্তিকারও! তার প্রতিটা কবিতার ভাঁজে ভাঁজে সন্নিবেশিত হয়েছে, দেশ, মাটি, মানুষ, প্রেম-ভালোবাসাসহ আরোও কত কিছু। আমার বন্ধুমাত্রই জানেন আমি খুবই সাধারণ একজন। রেজওয়ান ভাইয়ের মতো একজন বড় মাপের লেখকের লেখার মান বিচার করে ভালো মন্দ কোন কিছু লেখার যোগ্যতা বা ধৃষ্টতা কোনটাই আমার নেই। তবে আমি রেজওয়ান ভাইয়ের লেখার একজন সাধারণ পাঠক, তার লেখা পড়েই তার সাথে পরিচয় এবং কাছে আসা। তার সানিধ্য পেয়েই বুঝেছি তিনি কেবলমাত্র একজন ভালো লেখকই নন সেই সাথে চমৎকার ব্যক্তিত্বসম্পন্ন জনদরদী একজন মানুষ। আমাকে অভিভাবকের মতোই আগলে রেখেছেন, শিক্ষকের মতোই নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ভাইয়ের মতোই, বন্ধুর মতোই যে কোন ভালো কাজে প্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন। এই অকৃত্রিম বন্ধনের রেশ ধরেই তার প্রতি আমার বা আমার প্রতি তার ভ্রাতৃ সুলভ একটা অধিকার তৈরী হয়ে গেছে অঘোষিত ভাবেই। নিজেকে জ্ঞানী বা মূর্খ প্রমাণের উদ্দেশ্যে নয় বরং ভ্রাতৃত্বের দাবী নিয়েই রেজওয়ান ভাইয়ের লেখা বইটি পড়ে একান্তভাবেই আমার নিজস্ব ভালো লাগা মন্দ লাগার প্রকাশ করছি আমার এই নোটে, আশা করি সবাই আমার এই নোটটাকেও আমার আর দশটা নোটের মতোই স্বাভাবিক ভাবেই গ্রহণ করবেন।
দীর্ঘ প্রবাস জীবনের এক ঘেঁয়ে যন্ত্রণা এতটুকুন বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি দেশের ভাবনায়, দেশকে নিয়ে বিস্তর ভেবেছেন বলেই তার মসি দিয়েই প্রকাশ পেয়েছে বাংলা মায়ের সন্তানদের বীভৎস কীর্তি। তার ভাষায়ঃ "জোটবদ্ধ সন্তান মাতৃসম্ভ্রমের ইজারাদার। অতঃপর; নিজেরই মাতৃস্তনে ইতর কামড় এবং ক্রমশঃ পঞ্চবার্ষিক পালাক্রম; সন্তানের গণধর্ষণে বিক্ষত এক মায়ের গল্প"। দেশের বর্তমান অবস্থান নিয়েও হতাশা ফুটে উঠেছে সুক্ষ্ণভাবেই "চল্লিশ বছর ধরে তাঁর এই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে পথ চলা। দিব্য গোলক ধাঁধার পথ। যতই সে হাঁটে ঘুরে ফিরে অবস্থান বদলায় না।" একটা ব্যাপার খুব ভালো করে লক্ষ্য করলাম আমার যারা প্রিয় লেখক আছেন তাদের কেউই বিড়ালকে ছেড়ে কথা বলেননি। জীবনানন্দ বিড়ালের লেজ ধরে টান দিয়ে পুরো একটা কবিতা লিখেছিলেন আর হূমায়ূন আহমেদ ত আস্ত একটা উপন্যাস খসিয়েছেন বিড়ালের ঘাড়ে ভর করে শিল্পী এস, এম সুলতানের বিড়াল প্রীতির কথা কে না জানেন গোটা দশেক বিড়াল তার আশ পাশে না থাকলে নাকি তার গলা দিয়ে জল পর্যন্ত নামতো না বাদ পড়েননি প্রিয় রেজওয়ান ভাইও তিনিও বিড়ালের নিঃশব্দ চলাফেরা কলমের আঁচড়ে তোলে এনেছেন আমাদের চোখের সামনে জলতঙ্কের শিরোনামে। বিড়াল এনেছেন আর তার আহার দেবেন না এমন কি হয় ? তাইতো বিড়ালের অন্নপ্রাশনের জন্য হাতির পিঠে চড়িয়ে ছেঁচড়া ইঁদুরকেও এনেছেন নিখুঁত ভাবে। বুড়িগঙ্গাও যে বেশ বুড়িয়ে গিয়ে বৈকৃত হয়ে গেছে তাকেও তুলে আনতে ভুলেননি, তেমনি ভাবে আমাদের সমাজ ও রীতি নীতির বিন্যাস ঘটিয়েছেন নিখুত শব্দ শৈলীতে। অন্তত নীলকন্ঠ বইটি পড়ে আমি যদি রেজওয়ান ভাইকে আপাদমস্তক প্রেমিক কবি বলি তাহলে নিশ্চয় কেউ আমায় নিকুচি করতে আসবেনা। মুখ টিপে সায় দিবে, হ্যা এটাই সত্য। বেশির ভাগ কবিতাতেই প্রেম বিরহের স্ফুরণ পরিলক্ষিত হয়েছে প্রগাঢ় ভাবেই। প্রেয়সীকে ইঙ্গিত করে অবলীলায় বলতে পেরেছেন "অবশেষে তোমারও 'জলবায়ূ বিপর্যয়!' ...আর তুমি? ক্রমহ্রাসমান উষ্ণতায় নিম্নগামী" এমনি ভাবে শব্দের নান্দনিকতায় পাঁজর ফুঁড়ে অকপটে বেরিয়েছে সার্বজনীন হৃদয়ের আর্তি। শুধু হতাশাই নয়, আত্মবিশ্বাসের দেখাও মিলেছে অনেক কবিতায় "...পরম বিশ্বাসে এখনো চোখে রাখি চোখ, সত্যি যদি একদিন খুঁজে পাই নিজেকে সেখানে"।
আমি কবিতা খুব ভালো একটা বুঝিনা তাই কবিতার ভালো মন্দ বিচার করা আমার ধাতে নেই। তবে এটা বুঝি কবি যখন লিখেন তখন হয়তো একান্ত নিজের দৃষ্টি কোণ থেকেই লিখেন কিন্তু পাঠকের দরবারে এসে হয়তো কোন কোন ক্ষেত্রে কবিতার মূল ভাবও পরিবর্তন হয়ে যায় বুঝার ভুলে। তাই আমি একচেটিয়া ভাবে বলবো না সব কবিতাই আমার ভালো লেগেছে, কিছু কিছু কবিতার ভাবার্থ এখনো বুঝে উঠতে পারিনি, তবে চেষ্টা করছি সেগুলোর মূল ভাব বা মর্ম উদ্ঘাটন করতে; নিতান্তই নিজে থেকে বুঝতে না পারলে লেখকের দ্বারস্ত হবো। যাহোক, প্রকাশকের ঘাড়ে এবার কিছু দোষ চাপাতে চাই, তিনি হয়তো প্রুফ রিডিংয়ে সময়ের সাশ্রয় করতে চেয়েছিলেন বলেই বানানে বেশ কিছু ত্রুটি দেখা গেছে, এটা আমার মতো সাধারণ পাঠকের জন্য খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত এবং ক্ষতিকর। আমরা যারা সাধারণ পাঠক, তারা রেজওয়ান ভাইয়ের মতো বড় মাপের লেখকদের বানান দেখেই শিখি। কিন্তু প্রকাশকের অযত্নে কোন কোন বানান আমাদের কাছে ভুলই থেকেই যায়, সংশোধন হয়না আর। বইয়ের প্রকাশক ভিভি রঞ্জন দা আমার সাথে নেই তবুও যদি তাঁর নজরে আমার এই লেখা পড়ে যায় তবে তাঁর কাছে সবিনয় অনুরোধ থাকলো আগামীতে যেন তিনি প্রুফ রিডিংয়ে পর্যাপ্ত সময় খরচ করে আমাদেরকে সঠিক বানান শেখার সুযোগ সৃষ্টি করে দেন। সৌন্দর্য্য ব্যাপারটাই আপেক্ষিক, আমার কাছে যেটা ভালো লাগবে হয়তো অন্যের কাছে সেটাই মন্দের শীর্ষে। তাই রেজওয়ান ভাইয়ের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা পূর্বক একান্ত আমার দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে বলছি বইয়ের প্রচ্ছদটা আমাকে খুব একটা আকৃষ্ট করতে পারেনি। এতো কড়া রঙের আধিক্য কেন জানি আমার চোখ সহ্য করতে পারেনা। অনেক সময় বইয়ের প্রচ্ছদই বইয়ের ভেতরের মূল ভাবনা প্রকাশ করে দেয় খুবই সুক্ষ্ণ ভাবে, এই ক্ষেত্র থেকে বলবো প্রচ্ছদ শিল্পী চেষ্টা করেছেন বইয়ের নামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রচ্ছদ বিন্যাস করার কিন্তু কড়া রঙের ব্যবহার আমার কাছে শিশুতোষ বইয়ের কভারের মতোই মনে হলো। শেষ পর্যায়ে এসে একটি কথা বলবো, প্রবাদে বলেঃ "সাত খুন মাফ"। বইটা পড়ে যে আনন্দ পেয়েছি, যে ভালো লাগা কুড়িয়ে নিয়েছি তাতে ছোট খাটো কারিগরি ত্রুটিগুলো সাত খুনের পর্যায়ে পড়লেও মাফ করে দেয়া যায়। রেজওয়ান ভাইয়ের কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এমন একটা চমৎকার বই আমাদের হাতে তুলে দেবার জন্য, এবার আমাদের ক্ষুধাটা আরোও বেড়ে গেলো আগামীতে আরোও লেখা চাই, আরোও বই চাই। আরোও ভালো লাগা কুড়িয়ে নিতে চাই আপনার কবিতা থেকে। সর্বশেষে সবার কাছে এবং বিশেষ করে সুপ্রিয় রেজওয়ান ভাইয়ের কাছে বিশেষ ক্ষমা প্রার্থনাপূর্বক বলছি জ্ঞানী, বিদ্বান বা পন্ডিত আমি নই, তাই এই নোটের মাধ্যমে কোন ধরনের পান্ডিত্যও জাহির করার বিন্দুমাত্র কোন চেষ্টা করিনি। একান্তই নিজের ভালোলাগা মন্দলাগা প্রকাশ করছি মাত্র। আমার এই ভালোলাগা মন্দলাগাতে কারো কোন দ্বিমত থাকলে বা কেউ ঘূণাক্ষরেও ব্যথিত হলে আমি সত্যিই দুঃখিত এবং আন্তরিক ভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।
জবরুল আলম সুমন
সিলেট।
২৭শে ফেব্রুয়ারী ২০১২ খৃষ্টাব্দ।
কোনটা ছেড়ে কোনটা আগে পড়বো তা নির্ধারণ করতে পারছিলাম না। যখনি আমি সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগী তখনি একটা লটারীর ব্যবস্থা করি এই ক্ষেত্রেও হলো তাই। ডান হাতের তর্জনী, মধ্যমা ও অনামিকার ঘাড়ে আলাদা করে তিনটা বইয়ের নাম চাপালাম মনে মনে তারপর আমার দু বছর বয়েসী ভাতিজী নুসরাতকে ডাকলাম প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় নির্বাচন করে রায় ঘোষণার জন্য। সে প্রথমে এসেই মধ্যমা নির্বাচন করলো। মৌ'দি তুমি প্রথম হয়েছো !! এবার রেজওয়ান ভাই ও তুবা আপুর পালা। এই মানিক জোড়কে আলাদা করে কাকে প্রথমে রাখে তা জানার জন্য মধ্যমা আঙ্গুল লুকিয়ে বাকি দুটো তার সামনে রাখলাম কিন্তু সে কিছুতেই আর অন্য আঙ্গুল ধরবে না! লুকানো মধ্যমাতেই তার চোখ আটকে আছে। চকোলেটের লোভ দেখালাম কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। দিলাম একটা চড়! আজকালকার ছেলে পুলেরা এতো ফাজিল হয়ে জন্মায় কেন কে জানে! ভেঁ ভেঁ করে কেঁদে সে চলে গেলো। আমি মহা যন্ত্রণায় পড়ে গেলাম, লটারীতে স্থূল কারচুপি হয়েছে বলে বাতিল করে দিলাম। এবার নিজে নিজেই নির্ধারণ করবো। তিনটা আলাদা কাগজে একটা করে তিনটা বইয়ের নাম লিখে শাফল করে ফ্লোরে ফেলে দিলাম তারপর একটা একটা করে তুললাম। এবার আমি প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পেয়ে গেছি! কিন্তু স্বীকার করছি পড়তে গিয়ে নিয়মে আটকে থাকতে পারিনি এক সাথে তিনটি বইতেই সমান তালে চষে বেড়িয়েছি।
গোগ্রাসে গিলে যে বইটা শেষ করেছি তার নাম "নীল কন্ঠ" লেখক সুপ্রিয় শ্রদ্ধেয় বড় ভাই মুনীব রেজওয়ান। নীল কন্ঠ নাম ধারণ করে তিনি ফেসবুকে সবার ফেস টু ফেস হয়ে তার অসাধারণ ব্যক্তিত্ব দিয়ে সবার নজর কেড়েছেন, হয়েছেন সর্বজনবিদিত প্রিয়ভাজন। তার প্রেরণাদায়ী মন্তব্যে মুর্খরাও কলম ধরতে বাধ্য হয়, হয়ে উঠে কবি বা লেখক এমন কি আবৃত্তিকারও! তার প্রতিটা কবিতার ভাঁজে ভাঁজে সন্নিবেশিত হয়েছে, দেশ, মাটি, মানুষ, প্রেম-ভালোবাসাসহ আরোও কত কিছু। আমার বন্ধুমাত্রই জানেন আমি খুবই সাধারণ একজন। রেজওয়ান ভাইয়ের মতো একজন বড় মাপের লেখকের লেখার মান বিচার করে ভালো মন্দ কোন কিছু লেখার যোগ্যতা বা ধৃষ্টতা কোনটাই আমার নেই। তবে আমি রেজওয়ান ভাইয়ের লেখার একজন সাধারণ পাঠক, তার লেখা পড়েই তার সাথে পরিচয় এবং কাছে আসা। তার সানিধ্য পেয়েই বুঝেছি তিনি কেবলমাত্র একজন ভালো লেখকই নন সেই সাথে চমৎকার ব্যক্তিত্বসম্পন্ন জনদরদী একজন মানুষ। আমাকে অভিভাবকের মতোই আগলে রেখেছেন, শিক্ষকের মতোই নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ভাইয়ের মতোই, বন্ধুর মতোই যে কোন ভালো কাজে প্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন। এই অকৃত্রিম বন্ধনের রেশ ধরেই তার প্রতি আমার বা আমার প্রতি তার ভ্রাতৃ সুলভ একটা অধিকার তৈরী হয়ে গেছে অঘোষিত ভাবেই। নিজেকে জ্ঞানী বা মূর্খ প্রমাণের উদ্দেশ্যে নয় বরং ভ্রাতৃত্বের দাবী নিয়েই রেজওয়ান ভাইয়ের লেখা বইটি পড়ে একান্তভাবেই আমার নিজস্ব ভালো লাগা মন্দ লাগার প্রকাশ করছি আমার এই নোটে, আশা করি সবাই আমার এই নোটটাকেও আমার আর দশটা নোটের মতোই স্বাভাবিক ভাবেই গ্রহণ করবেন।
দীর্ঘ প্রবাস জীবনের এক ঘেঁয়ে যন্ত্রণা এতটুকুন বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি দেশের ভাবনায়, দেশকে নিয়ে বিস্তর ভেবেছেন বলেই তার মসি দিয়েই প্রকাশ পেয়েছে বাংলা মায়ের সন্তানদের বীভৎস কীর্তি। তার ভাষায়ঃ "জোটবদ্ধ সন্তান মাতৃসম্ভ্রমের ইজারাদার। অতঃপর; নিজেরই মাতৃস্তনে ইতর কামড় এবং ক্রমশঃ পঞ্চবার্ষিক পালাক্রম; সন্তানের গণধর্ষণে বিক্ষত এক মায়ের গল্প"। দেশের বর্তমান অবস্থান নিয়েও হতাশা ফুটে উঠেছে সুক্ষ্ণভাবেই "চল্লিশ বছর ধরে তাঁর এই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে পথ চলা। দিব্য গোলক ধাঁধার পথ। যতই সে হাঁটে ঘুরে ফিরে অবস্থান বদলায় না।" একটা ব্যাপার খুব ভালো করে লক্ষ্য করলাম আমার যারা প্রিয় লেখক আছেন তাদের কেউই বিড়ালকে ছেড়ে কথা বলেননি। জীবনানন্দ বিড়ালের লেজ ধরে টান দিয়ে পুরো একটা কবিতা লিখেছিলেন আর হূমায়ূন আহমেদ ত আস্ত একটা উপন্যাস খসিয়েছেন বিড়ালের ঘাড়ে ভর করে শিল্পী এস, এম সুলতানের বিড়াল প্রীতির কথা কে না জানেন গোটা দশেক বিড়াল তার আশ পাশে না থাকলে নাকি তার গলা দিয়ে জল পর্যন্ত নামতো না বাদ পড়েননি প্রিয় রেজওয়ান ভাইও তিনিও বিড়ালের নিঃশব্দ চলাফেরা কলমের আঁচড়ে তোলে এনেছেন আমাদের চোখের সামনে জলতঙ্কের শিরোনামে। বিড়াল এনেছেন আর তার আহার দেবেন না এমন কি হয় ? তাইতো বিড়ালের অন্নপ্রাশনের জন্য হাতির পিঠে চড়িয়ে ছেঁচড়া ইঁদুরকেও এনেছেন নিখুঁত ভাবে। বুড়িগঙ্গাও যে বেশ বুড়িয়ে গিয়ে বৈকৃত হয়ে গেছে তাকেও তুলে আনতে ভুলেননি, তেমনি ভাবে আমাদের সমাজ ও রীতি নীতির বিন্যাস ঘটিয়েছেন নিখুত শব্দ শৈলীতে। অন্তত নীলকন্ঠ বইটি পড়ে আমি যদি রেজওয়ান ভাইকে আপাদমস্তক প্রেমিক কবি বলি তাহলে নিশ্চয় কেউ আমায় নিকুচি করতে আসবেনা। মুখ টিপে সায় দিবে, হ্যা এটাই সত্য। বেশির ভাগ কবিতাতেই প্রেম বিরহের স্ফুরণ পরিলক্ষিত হয়েছে প্রগাঢ় ভাবেই। প্রেয়সীকে ইঙ্গিত করে অবলীলায় বলতে পেরেছেন "অবশেষে তোমারও 'জলবায়ূ বিপর্যয়!' ...আর তুমি? ক্রমহ্রাসমান উষ্ণতায় নিম্নগামী" এমনি ভাবে শব্দের নান্দনিকতায় পাঁজর ফুঁড়ে অকপটে বেরিয়েছে সার্বজনীন হৃদয়ের আর্তি। শুধু হতাশাই নয়, আত্মবিশ্বাসের দেখাও মিলেছে অনেক কবিতায় "...পরম বিশ্বাসে এখনো চোখে রাখি চোখ, সত্যি যদি একদিন খুঁজে পাই নিজেকে সেখানে"।
আমি কবিতা খুব ভালো একটা বুঝিনা তাই কবিতার ভালো মন্দ বিচার করা আমার ধাতে নেই। তবে এটা বুঝি কবি যখন লিখেন তখন হয়তো একান্ত নিজের দৃষ্টি কোণ থেকেই লিখেন কিন্তু পাঠকের দরবারে এসে হয়তো কোন কোন ক্ষেত্রে কবিতার মূল ভাবও পরিবর্তন হয়ে যায় বুঝার ভুলে। তাই আমি একচেটিয়া ভাবে বলবো না সব কবিতাই আমার ভালো লেগেছে, কিছু কিছু কবিতার ভাবার্থ এখনো বুঝে উঠতে পারিনি, তবে চেষ্টা করছি সেগুলোর মূল ভাব বা মর্ম উদ্ঘাটন করতে; নিতান্তই নিজে থেকে বুঝতে না পারলে লেখকের দ্বারস্ত হবো। যাহোক, প্রকাশকের ঘাড়ে এবার কিছু দোষ চাপাতে চাই, তিনি হয়তো প্রুফ রিডিংয়ে সময়ের সাশ্রয় করতে চেয়েছিলেন বলেই বানানে বেশ কিছু ত্রুটি দেখা গেছে, এটা আমার মতো সাধারণ পাঠকের জন্য খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত এবং ক্ষতিকর। আমরা যারা সাধারণ পাঠক, তারা রেজওয়ান ভাইয়ের মতো বড় মাপের লেখকদের বানান দেখেই শিখি। কিন্তু প্রকাশকের অযত্নে কোন কোন বানান আমাদের কাছে ভুলই থেকেই যায়, সংশোধন হয়না আর। বইয়ের প্রকাশক ভিভি রঞ্জন দা আমার সাথে নেই তবুও যদি তাঁর নজরে আমার এই লেখা পড়ে যায় তবে তাঁর কাছে সবিনয় অনুরোধ থাকলো আগামীতে যেন তিনি প্রুফ রিডিংয়ে পর্যাপ্ত সময় খরচ করে আমাদেরকে সঠিক বানান শেখার সুযোগ সৃষ্টি করে দেন। সৌন্দর্য্য ব্যাপারটাই আপেক্ষিক, আমার কাছে যেটা ভালো লাগবে হয়তো অন্যের কাছে সেটাই মন্দের শীর্ষে। তাই রেজওয়ান ভাইয়ের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা পূর্বক একান্ত আমার দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে বলছি বইয়ের প্রচ্ছদটা আমাকে খুব একটা আকৃষ্ট করতে পারেনি। এতো কড়া রঙের আধিক্য কেন জানি আমার চোখ সহ্য করতে পারেনা। অনেক সময় বইয়ের প্রচ্ছদই বইয়ের ভেতরের মূল ভাবনা প্রকাশ করে দেয় খুবই সুক্ষ্ণ ভাবে, এই ক্ষেত্র থেকে বলবো প্রচ্ছদ শিল্পী চেষ্টা করেছেন বইয়ের নামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রচ্ছদ বিন্যাস করার কিন্তু কড়া রঙের ব্যবহার আমার কাছে শিশুতোষ বইয়ের কভারের মতোই মনে হলো। শেষ পর্যায়ে এসে একটি কথা বলবো, প্রবাদে বলেঃ "সাত খুন মাফ"। বইটা পড়ে যে আনন্দ পেয়েছি, যে ভালো লাগা কুড়িয়ে নিয়েছি তাতে ছোট খাটো কারিগরি ত্রুটিগুলো সাত খুনের পর্যায়ে পড়লেও মাফ করে দেয়া যায়। রেজওয়ান ভাইয়ের কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এমন একটা চমৎকার বই আমাদের হাতে তুলে দেবার জন্য, এবার আমাদের ক্ষুধাটা আরোও বেড়ে গেলো আগামীতে আরোও লেখা চাই, আরোও বই চাই। আরোও ভালো লাগা কুড়িয়ে নিতে চাই আপনার কবিতা থেকে। সর্বশেষে সবার কাছে এবং বিশেষ করে সুপ্রিয় রেজওয়ান ভাইয়ের কাছে বিশেষ ক্ষমা প্রার্থনাপূর্বক বলছি জ্ঞানী, বিদ্বান বা পন্ডিত আমি নই, তাই এই নোটের মাধ্যমে কোন ধরনের পান্ডিত্যও জাহির করার বিন্দুমাত্র কোন চেষ্টা করিনি। একান্তই নিজের ভালোলাগা মন্দলাগা প্রকাশ করছি মাত্র। আমার এই ভালোলাগা মন্দলাগাতে কারো কোন দ্বিমত থাকলে বা কেউ ঘূণাক্ষরেও ব্যথিত হলে আমি সত্যিই দুঃখিত এবং আন্তরিক ভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।
জবরুল আলম সুমন
সিলেট।
২৭শে ফেব্রুয়ারী ২০১২ খৃষ্টাব্দ।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন